“যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই” বদলে গেছে শান্তির মানে

একটি যুদ্ধবিহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় (যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই স্লোগানে) ১৯৮১ সালে শুরু হওয়া বিশ্ব শান্তি দিবস এখন কেবল অস্ত্র বিরতি ও সংঘাত নিরসনে আটকে নেই। সময়ের সঙ্গে বদলেছে শান্তির মানে।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় অস্ত্র বিরতি ও সংঘাত নিরসনে কেবল দিবস নয় সে বছর শান্তি দশক পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই শান্তির মানে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে বদলে সামগ্রিক ন্যায্যতাকে ধারণ করতে চায়। এখন কেবল অস্ত্র বিরতি বা সংঘর্ষ নিরসন শান্তি প্রতিষ্ঠা হিসেবে না দেখে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা ও টেকসই শান্তি অর্জনকে জরুরি বলে মনে করছেন শান্তি অধ্যয়ন, গবেষণা ও আন্দোলনকারীরা।

তারা বলছেন, বিশ্বে কোভিড পরিস্থিতিতে টিকা ও স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি নিশ্চিতকরণে ধনী দেশগুলোর প্রান্তিক দেশগুলোর প্রতি যে দায়িত্ব, সেটি নিশ্চিত করা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করবে।

জাতিসংঘ কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত দিন যা এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত বিশ্বের সকল দেশ ও সংগঠন কর্তৃক যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবী থেকে যুদ্ধ, হিংসা, আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগের মতো ঘটনা মুছে ফেলতেই প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ‘তৃতীয় মঙ্গলবার’ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বছরের শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য ‘রিকভারিং বেটার ফর ইকুইট্যাবল অ্যান্ড সাসটেইন্যাবল ওয়ার্ল্ড (ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই বিশ্ব পুনরুদ্ধার)’। টেকসই শান্তি অর্জনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ খুঁজে নিতে বিশ্বের সকল দেশকে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ যেমন জরুরি তেমনিই বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলোর উচিত অপেক্ষাকৃত গরীব ও প্রান্তিক দেশগুলো যেন বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। গত দুই বছরে বিশ্ব যে অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে যদি ক্ষমতাশালী শক্তিমান রাষ্ট্রগুলো এগিয়ে না আসে তাহলে বিশ্ব আরও বৈষম্যের দিকে এগিয়ে যাবে এবং সংঘাত বাড়বে। পক্ষান্তরে শান্তিও বিঘ্নিত হবে। সেইদিন বিবেচনায় এবারের শান্তি দিবসের যে প্রতিপাদ্য তা যথাযথ বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রফিক শাহরিয়ার বলেন, শান্তি এখন আর কেবল সংঘাত নিরসন ও অস্ত্র বিরতির ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে কোভিডের কারণে বিশ্ব নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ফলে এখন ন্যায্যতার প্রশ্নটি বড় হয়ে সামনে এসেছে। এখনও একশটি দেশ ভ্যাকসিনের তালিকায় নিজেদের ঢুকাতে পারেনি। ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় টিকা এবং স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি সহজলভ্য করে তোলার চেষ্টার কথা বারবার বলা হচ্ছে। এ সময়ে সেটি করতে না পারলে শান্তির নতুন যে সংজ্ঞায়ন দাঁড় হচ্ছে তা বাধাগ্রস্ত হবে।

আরো পড়ুন:
রাবি ভর্তি পরীক্ষা ৪ অক্টোবর
টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জোরালো পদক্ষেপের আহ্বান বিশ্ব নেতাদের-প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও কোভিড পরিস্থিতি এক জটিল বিশ্বের দিকে আমাদের অনবরত টানছে। উন্নত দেশগুলোকে প্রান্তিক দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলমান।

আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক তালেবান উত্থান ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্নকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র বিরতি ও সংঘাত নিরসনকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে প্রথম দিবসটি পালন হয়। সে বছর প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিশ্বের মানুষের শান্তির অধিকার’। পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর বিশ্ব পরিস্থিতিকে সামনে রেখে দিবসটি পালনে শান্তির নানা প্রস্তাবনা তুলে প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়। জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ যে কর্মসূচীতে শান্তির বার্তা বয়ে আনে সেগুলোই শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবে প্রস্তাব আনে। পরে তা গৃহীত হয়।

সেপ্টেম্বর ২১.২০২১ at ১০:৫৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বিটি/জআ