প্রতিসেকেন্ডে এক ট্রাক পোশাক যাচ্ছে বর্জ্যের ভাগাড়ে!

ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য বাড়ায় কিছু ব্র্যান্ড আর ব্র্যান্ডের আড়ালের মানুষের পকেট ভারী হয়েছে লাখ লাখ ডলারে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়াই কিনছেন পোশাক। একবার দুইবার ব্যবহারের পরই সেটা ফেলে রাখছেন বা ফেলে দিচ্ছেন। একটি পোশাকের গড় আয়ু কমছে তো কমছেই। সঙ্গে বিশ্ব একটু একটু পরিণত হচ্ছে ফ্যাশন ময়লার ভাগাড়ে। আলমারি বা ওয়্যারড্রোব খুললেই এত কাপড়, যার বেশির ভাগই পড়া হয় না। অথচ ফ্যাশনের খপ্পরে পড়ে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি বেড়েছে হু হু করে।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ৩০ লাখ টন কাপড় বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বে ৯ কোটি ২০ লাখ টন পোশাকের বর্জ্য তৈরি হয়। তার মানে পোশাকের বর্জ্যে পরিপূর্ণ একটি ট্রাক প্রতি সেকেন্ডে ল্যান্ডফিলে যাত্রা শেষ করে। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ১৩ কোটি টন পোশাক বর্জ্যের ভাগাড়ে যাবে। অথচ সারাবিশ্বে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের মাত্র ১২ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা হয়।

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে সারা বিশ্বের ১০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়। প্রতি বছর টেক্সটাইল খাত থেকে ১২০ কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে যায়। বিশ্বের ২০ শতাংশ পানির অপচয় হয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ১৫ বছর আগে মানুষ যে পরিমাণ পোশাক কিনত, এখন তার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি পোশাক কেনে। যুক্তরাজ্যে প্রতি মিনিটে ২ টন পোশাক কেনা হয়। প্রতিবছর ৫ কোটি ৬০ লাখ টন কাপড় কেনা হয় সারা বিশ্বে। ২০৩০ সালে এ পরিমাণ ৯ কোটি ৩০ লাখ টন আর ২০৫০ সাল নাগাদ এই পরিমাণ ১৬ কোটি টনের পৌঁছাবে।

আরও পড়ুন:

পোশাক যে কাপড় দিয়ে তৈরি হয়, সেটি উৎপাদনে অনেক প্রাকৃতিক শক্তি, জায়গা আর পানি খরচ হয়। সুতি কাপড় বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কাপড়গুলোর একটি। একটা সুতির টি-শার্ট বানাতে যে পরিমাণ কাপড় লাগে, সেটির জন্য প্রয়োজনীয় তুলা উৎপাদন করতে ২০ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। বিশ্বে যত পানি ব্যবহৃত হয়, তার শতকরা ২০ ভাগ খরচ হয়ে যায় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে। এসব দিয়ে উৎপাদিত পোশাক দ্রুতই বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। তা ল্যান্ডফিলে যায়, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, পানিদূষণ করে নানাভাবে পরিবেশ দূষণে অবদান রাখছে।

ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপনসিবল অ্যাক্রিডিটেড প্রোডাকশন (ডব্লিউআরএপি) জানাচ্ছে, প্রতিবছর যুক্তরাজ্যে ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার জামাকাপড় ফেলে দেওয়া হয়। আর সেগুলো শুধু ল্যান্ডফিলে পরিণত হয়।

আরো পড়ুন:
গাবতলীতে হতদারিদ্রদের মাঝে চাল বিতরন
মানবজাতির পাশে থাকলে বুদ্ধজ্ঞান, ধর্মদর্শন লাভ করা যায়

বিবিসির ‘হোয়াই ক্লোদস আর হার্ড টু রিসাইকেল’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৩ শতাংশ পোশাক হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়, না হয় ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয় বা আবর্জনা হিসেবে ল্যান্ডফিলে জমা হয়। ১২ শতাংশ পোশাক রিসাইকেলড হয়ে ম্যাট্রেস, ক্লিনিং ক্লোদস, পাপোশ, লুসনি বা অন্যান্য কম দামের নানা কিছুতে পরিণত হয়। মাত্র ১ শতাংশ পোশাক রিসাইকেল হয়ে নতুন কাপড়ে পরিণত হয়। প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের কাপড় ফেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি অর্থমূল্যে যার দাম দাঁড়ায় ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে কম বর্জ্য উৎপাদন করা দেশের নাম জার্মানি। তারাও মাত্র ৫০ শতাংশ ফেলে দেওয়া পোশাক রিসাইকেল করে নতুন পোশাক বানায়। ২০১৬ সালেই ১১ লাখ টন ফ্রেব্রিক নষ্ট হয়েছিল। আরও দুঃখজনক, এর ৭৩ শতাংশই প্রি-কনজিউমার ওয়েস্ট। মানে, ওই পোশাকগুলো ভোক্তারা কেনেন নি বা কিনলেও ব্যবহার করেননি। এমন পুরনো অব্যবহৃত ফেব্রিকসের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ টন।

সেপ্টেম্বর ২০.২০২১ at ১৭:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সনি/জআ