নরসিংদী সিভিল সার্জন অফিসের টেকনোলজিস্ট দুর্ণীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়

দেশের জনগণের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার “স্বাস্থ্য সেবা” আর সেবা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ড্রাইভার থেকে শুরু করে পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে অবৈধভাবে শতকোটি টাকা অর্জনের বিষয়টি। মহামারী করোনাকালে প্রথম উন্মেচিত হয় এসব চমকপ্রদ তথ্য যা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।

অন্যান্য সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক বেতনে পরিবার চালাতে যেখানে কষ্টের সীমা নেই সেখানে এ বিভাগের কিছু সাধারন কর্মচারী, টেকনোলজিস্ট ও কর্মকর্তাদের গড়ে উঠেছে সম্পদের পাহাড়।

নরসিংদীতে এমন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বাদল চন্দ্র নন্দী এর বিরুদ্ধে। দুর্ণীতির মাধ্যমে সরকারী টাকা আত্মসাৎ, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় তার বিরুদ্ধে দুদকে লিখিত অভিযোগ করেছেন নরসিংদী শহরের বানিছল মহল্লার জনৈক তারেকুজ্জামান।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুলিপি পাঠিয়েছেন সচিব, স্বাস্থ সেবা বিভাগ, স্বাস্থ ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা। মহা পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী, ঢাকা । পরিচালক, হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমুহ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী ঢাকা। জেলা প্রশাসক, নরসিংদী ও সভাপতি করোনাকালীন সেবা কমিটি। পুলিশ সুপার নরসিংদী, ও সদস্য করোনাকালীন সেবা কমিটি। সিভিল সার্জন নরসিংদী, ও সদস্য সচিব করোনাকালীন সেবা কমিটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নরসিংদী প্রেস ক্লাব।

অভিযোগে জানা যায়, করোনার এ সময়ে কয়েকটি বুথের মাধ্যমে বাড়ী বাড়ী গিয়ে করোনার সেম্পল কালেকশন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন মাঠ পর্যায় থেকে শত শত করোনা সেম্পল কালেকশন করা হয়। বাড়ী থেকে সেম্পল সংগ্রহ করা হলে করোনা পরীক্ষার সরকারী ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩শত টাকা।

অফিসে এসে কেউ পরীক্ষা করালে এক্ষেত্রে সরকারী ফি ১শত টাকা নির্ধারণ করা আছে। অথচ বাদল চন্দ্র নন্দী নরসিংদী সদর উপজেলার পৌর এলাকা ও ইউনিয়নের গ্রাম থেকে প্রতিদিন শত শত সেম্পল কালেশন করে প্রতিটি পরীক্ষার ফি বাবদ ৩শত টাকা আদায় করছেন।

এসব সেম্পলগুলো অফিস কালেকশন দেখিয়ে প্রতিটি পরীক্ষা বাবদ ১শত টাকা করে সরকারী ফাণ্ডে জমা দিয়ে বাকী ২শত টাকা সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে তিনি সেম্পল কালেকশ এর শুরু থেকে হাজার হাজার নমুনা পরীক্ষা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটস্থ করে চলেছেন।

বাদল চন্দ্র নন্দী একজন সেলফ ড্রয়িং অফিসার হিসেবে নরসিংদী জেলার শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়নোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রাপ্তির ফাইল ডিলিং করে থাকেন। ক্লিনিক ও ডায়নোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন বাবদ প্রথমেই নিয়ে থাকেন মোটা অংকের টাকা উৎকোচ।

তারপর লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর অবৈধ মানহীন ক্লিনিক ও ডায়নোস্টিক সেন্টারগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করতে থাকে। বিনিময়ে বাদল নন্দীকে মাস শেষে দিতে হয় নির্ধারিত অংকের উৎকোচ। সূত্র মতে নরসিংদী জেলায় হাতে গুনা ১০/১৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোহারা আদায় করা হয় শতাধিক অবৈধ ক্লিনিক থেকে। বাদল নন্দী নিজেও নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন রোডে অবস্থিত লাইফ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক।

বাদল চন্দ্র নন্দী দীর্ঘদিন যাবত নরসিংদী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দাপটের সাথে কর্মরত আছেন। তার তদ্বির দাপটের কারণে নরসিংদী জেলার অধিবাসী না হয়েও তার ভাগিনা ও ভাগিনি স্বাস্থ্য বিভাগে অবৈধ পন্থায় চাকুরী পেয়েছেন। অন্য জেলার বাসিন্দা তার ভাগিনা প্রশান্ত নন্দি নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সহকারী ও ভাগিনি সিএসপি হিসেবে কর্মরত আছেন।

আরো পড়ুন :
নড়াইলে সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে সাধারন মানুষ
রূপগঞ্জে মসজিদের বারান্দায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা

দুর্ণীতির মাধ্যমে বাদল নন্দি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। একটি পুরাতন ও অপরটি নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবন।

নির্মাণাধীন ভবনের পাশে রয়েছে ৫ শতাংশ বাড়ীর খালি জায়গা, চিনিশপুর ইউনিয়নের রাজাদিতে জমি, নরসিংদী শহরের প্রাণকেন্দ্র ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে ১০ শতাংশ জায়গা রয়েছে তার। তার নামে ও নিকটাত্মীয়দের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। তদন্ত করলে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে অভিযোগপত্রে দাবী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাদল চন্দ্র নন্দী অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, শুধু মাধবদী এলাকার কিছু সেম্পল তার মাধ্যমে কালেকশন হয়। পরীক্ষার ফি সঠিকভাবে জমা হচ্ছে। তবে মাঠ পর্যায় থেকে এ পর্যন্ত কতগুলো সেম্পল কালেকশন করা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা তিনি জানাতে পারেনি।

ভাগিনা-ভাগিনির চাকুরী বিষয়ে তিনি বলেন, হাজীপুরের তাদের বাড়ী রয়েছে। তারা নরসিংদীর স্থায়ী বাসিন্দা। ক্লিনিক ও ডায়ানোস্টিক সেন্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী সিভিল সার্জনকে নিয়ে তিনি সেগুলো পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে আমরা শুধু রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে পাঠিয়ে থাকি। সূত্র জানায়, বাদল নন্দীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করা হলে শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাবে।

সেপ্টেম্বর  ১৭.২০২১ at ১৯:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ইফি/রারি