খবর প্রকাশে খাবার ও ঘর নির্মাণে সহায়তা পেলেন তালার সেই বৃদ্ধা মা

“সন্তানের কাছে আশ্রয় হয়নি গর্ভধারনী মায়ের, ছাগলের খুপড়িতেই বসবাস ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মনোয়াররা” শিরোনামে খবর প্রকাশে দৃষ্টিগোচর হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তারিফ উল-হাসান’র। তিনি রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মনোয়ারা বর্তমান ঠিকানা সাতক্ষীরার তালা সদরের বারুইহাটিস্থ প্রতিবেশী দেবরের ছাগলের সাথে খুপড়ি ঘরে থাকা ষাটোর্ধ অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে দেখতে যান।

এসময় তিনি বৃৃদ্ধার মায়ের সাথে কথা বলে শারীরিক-মানষিকসহ সার্বিক অবসস্থার খোঁজ-খবর নেন। তিনি বৃদ্ধাকে নগদ ১ হাজার টাকা, ১০ কেজি চাল, ১ কেজি তৈল,১ কেজি লবণ, ২ কেজি আালু ও ১ কেজি ডাল প্রদান করেন। তাৎক্ষণিক তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাজিজব সরদারকে বৃদ্ধা মনোয়ারাকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদানের নির্দেশ দেন। এছাড়া পরে তার ঘর সংষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় টিন,নগদ ৩ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

এসময় বৃদ্ধা মনোয়ারা সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নিতে না চাওয়ায় তাকে আজীবন প্রতিবেশি দেবরের জায়গায় থাকার বন্দোবস্ত করেন এবং ঐ ঘর সংষ্কারের জন্য নগদ টাকা ও উপকরণ প্রদানের ঘোষনা দেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে ছিলেন তালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল হক ও মোঃ মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

বৃদ্ধা মনোয়ারাকে নিয়ে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।যেখানে উঠে আসে তার যাপিত জীবনের করুণ চিত্র। প্রতিবেদনকালে মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, বাকি জীবন তাকে যেন দু’বেলা দু’মুঠো খাবার ও একটু চিকিৎসার আবদার করেন।

বৃদ্ধা মনোয়ারা জীবনের পড়ন্ত বেলায় খবরের মানুষের মাধ্যমে ইউএনও তার খোজ-খবর নিয়েছেন,খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন এটা তার পরম প্রাপ্তি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট খবরের মানুষগুলো ও ইউএনও’র জন্য প্রাণ খুলে আল্লাহর কাছে দোয় করেছেন।

প্রসঙ্গত, তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামের মৃৃত ফরিদ উদ্দীন খাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ৩ বছর পূর্বে স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তান কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন মাকে নিজ বাড়িতে পুণর্বাসন ও ভালভাবে দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে তাকে দিয়ে সমুদয় সম্পত্তি বিক্রি করে টাকাগুলো নিয়ে নেয়।

আরো পড়ুন :
বেড়ায় চলছে দূর্গোৎসবের প্রস্তুতি
৬৮৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী

সর্বশেষ আশ্রয়স্থল পিতার রেখে যাওয়া ভিটা-বাড়ির আড়াই শতক জায়গাও বিক্রি করে নেয়। এরপর মাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে রাখলেও মাত্র ছ’মাসের মধ্যে সেখান থেকে ছেলে বৌ এর অত্যাচারে চলে বাধ্য হন বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগম।। এরপর স্বামীর মৃত্যুর পর সত্যিই একা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এমনকি ছেলের মিথ্যা আশ্বাসে ভরসা করে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটা-বাড়ির যায়গা টুকু বিক্রি করেও ছেলেকে দিয়েছেন। তবে এসবে জন্য নিজের নিয়তিকে দাযী করলেও ছেলেকে কোন অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ রয়েছে তার জন্য জানান, মা মনোয়ারা বেগম।

এব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিফ উল হাসান জানান, একজন অসহায় বৃদ্ধা মায়ের জন্য সরকারের পক্ষে কিছু করতে পারছেন এটাও তার জন্য বড় প্রাপ্তি। ভবিষ্যতেও তিনি মনোয়ারাদের খোঁজ-খবর ও সরকারের পক্ষে সহায়তার আশ্বাস দেন।

সরকারি কিংবা বে-সরকারি উদ্যোগে ভাল থাকুন বৃদ্ধা মা মনোয়রা বেগমরা, সুস্থ্য থাকুন তারা, এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীরও।

সেপ্টেম্বর  ১৩.২০২১ at ১৭:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোরোটি/রারি