দৌলতপুরের পানিবন্দি ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত খুলছে না

করোনা মহামারির কারণে টানা দেড় বছর বন্ধ রাখার পর সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত খুলছে না। উপজেলার বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি অবস্থায় থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধই থাকছে। যা বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ক্লাসে অংশ নিতে দেখা গেছে।

জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার বন্যাকবলিত চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান সস্পূর্ণ পানিবন্দি থাকার কারণে খোলা যায়নি। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে যতদূর সম্ভব প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে রাখার নির্দেশনা দেয়া হলেও ক্লাস নেয়ার উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হচ্ছে। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে গেলে বন্ধ এই প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস নেয়া শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দীর্ঘ বিরতির পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে চিলমারী ইউনিয়নের কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খারিজাথাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা হলেও যাতায়াত সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না। ওই ইউনিয়নের এই দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাজুমারা মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নবগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা হলেও যথারীতি যাতায়াত সমস্যায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। বন্ধ রয়েছে, রামকৃষ্ণপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ও। অন্যদিকে চিলমারী ইউনিয়নে ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশিরভাগই পানিবন্দি হয়ে পড়ায় এর মধ্যে অন্তত ১৫টি বিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। যখন যে বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে যাবে ঠিক তখনই সেই বিদ্যালয়ের ক্লাস গ্রহণ শুরু করা হবে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান।

চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাদায় সয়লাব হয়ে পড়া তাদের স্কুল রোববার কোনোমতে খোলার ব্যবস্থা করা হলেও কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। গত এক মাস ধরে চারদিকে বন্যার পানি জমে থাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা কেউ স্কুলে আসতে পারেনি। তবে অচিরেই বন্যার পানি সরে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরদার মো. আবু সালেক জানান, চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নে একটি মাদ্রাসাসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসম্ভব খুলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বন্যার পানি সরে গেলে বন্ধ এসব প্রতিষ্ঠানে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদা সিদ্দিকা জানান, বন্যাকবলিত দুটি ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশের শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তারপরেও যতদূর সম্ভব এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে বলা হয়েছে। তবে উপজেলার অন্য বিদ্যালয়গুলো যথারীতি খুলে দেয়া হয়েছে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আরো পড়ুন:
হাতীবান্ধায় প্রধান শিক্ষের বিরুদ্ধে স্কুলের গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ
শিবগঞ্জে সেনা সদস্য কর্তৃক গৃহবধুকে ধর্ষণ, ২০দিন যাবৎ লাপাত্তা!

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার স্কুলগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি, কিছু স্থানে ইতোমধ্যে পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করছি, অচিরেই পানিবন্দি অবস্থায় থাকা স্কুলগুলোর পানি সরে যাবে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে উপজেলা পরিষদের পার্শ্ববর্তী মানিকদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদেরও বসানো হয় নির্ধারিত দূরত্ব না মেনে। স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেখে তা তড়িঘড়ি করে গোছগাছ করার চেষ্টা করা হলেও জাতীয় পতাকায় একটুও খেয়াল হয়নি তাদের। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আসমা খাতুন বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সবাইকে বলে দিয়েছি। দুপুর পর্যন্ত পতাকার স্তম্ভ খালি থাকার বিষয়ে তিনি জানান, এটি সম্ভবত তাদের মনে ছিল না। যা তাদের সুস্পষ্ট অবহেলার প্রকাশই বলা যায়।

অন্যদিকে রোববার থেকে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোের শিক্ষার্থীদের মন খারাপের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও খানিকটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নতুনভাবে নিজেদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করতে দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলেও দেখা গেছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে পাঠদান পরিচালনার আপ্রাণ চেষ্টা। তবে শ্রেণিকক্ষের আয়তন, বেঞ্চ, টয়লেট, পানির ব্যবস্থা ও অন্যান্য কিছু উল্লেখযোগ্য সংকট মিলে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা পুরোপুরি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ ঘরবন্দি জীবনের অবসান ঘটায় অন্যরকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।

সেপ্টেম্বর ১২.২০২১ at ১৫:৩৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আকে/এআস/জআ