দীর্ঘ দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষের দ্বার খুলল

৫৪৪ দিন পর শ্রেণিকক্ষের দ্বার খুলল আজ রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর)। কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে আজ থেকে। তবে সংক্রম বাড়লে আবার বন্ধ হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগে থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করার নির্দেশনা ছিল। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম প্রস্তুতি ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে সাজানো হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষ।

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। বিশেষ করে দুই শিফটের স্কুলগুলোতে সকাল ৮টার আগেই শিক্ষার্থীরা নতুন স্কুল ড্রেস পরে অভিভাবকের হাত ধরে উপস্থিত হতে দেখা গেছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুইটি শ্রেণির পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী একটি রুটিনও প্রণয়ন করা হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী, আজ রবিবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিষয়টি না জেনে অনেক অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে চলে আসতে দেখা গেছে।

রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেট থেকে ঘুরে যেতে থাকা এক শিক্ষার্থীর মা জানালেন, আমরা শুধু স্কুল খোলা সেটা জেনেছি, আলাদা আলাদা দিনে ক্লাস সেটা জানা ছিল না। আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার ক্লাস আজ না। এজন্য ঘুরে যাচ্ছি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানান, প্রতি দিন দু’টি শ্রেণির শ্রেণি কার্যক্রম চলবে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা। প্রতিদিন দুটি শ্রেণির তিনটি বিষয়ের পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের প্রত্যেক দিন বিদ্যালয়ে যাবে। তাদের সঙ্গে শনিবার চতুর্থ শ্রেণি, রবিবার তৃতীয় শ্রেণি, সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাবে। সপ্তাহের বাকী দুদিন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এককভাবে বিদ্যালয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, পাঠদান শুরুর আগে ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হবে। এরপর সকাল ৯টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু হবে শ্রেণি পাঠদান। এই সূচি নির্ধারিত থাকলেও ২০২১ সালের পাঠ-পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম চার দিন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুতিমূলক ক্লাস নিতে হবে।

আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার গাইডলাইন অনুযায়ী, ১৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। এতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি ও তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়। কীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলবে তাও উল্লেখ করা হয়। শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

রাজধানীর মুহাম্মদপুর একটি স্কুলে সকাল ৮টা থেকে স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। এর আগেই শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষাঙ্গণে পৌঁছে। শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে বেলুন ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষার্থীরাও নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে বসেছে। দীর্ঘদিন পর স্কুলে ফিরে তারাও বেশ উৎফুল্ল।

আরো পড়ুন:
মাথায় কাঁচাপাকা চুল, মুখে বয়সের ছাপ- এ কী দশা প্রসেনজিতের!
পরীমনি সহ ব্যক্তিচরিত্র হননকারী সব কনটেন্ট সরাতে আইনি নোটিস

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আন্তরিক দেখা গেলেও অনেক অভিভাবকের মধ্যে তার কিছুটা ঘাটতি ছিল বলে জানান তিনি। পথচারী বলেন, সরেজমিনে অভিভাবকদের ভিড় করতে দেখা গেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ নানাভাবে অভিভাবকদের ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বারবার বললেও অনেকের মধ্যে তা মানতে অনীহা দেখা গেছে।

এদিকে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষারত অভিভাবকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা গেছে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে স্কুলের সামনে অনেকে অবস্থান নিলেও নিজেদের থেকে দূরে-দূরে রয়েছেন তারা। অনেকদিন পর সন্তানদের শিক্ষাঙ্গণে নিয়ে আসায় তাদের অনেকের মধ্যে উৎসাহ-আগ্রহ দেখা গেছে।

সেপ্টেম্বর ১২.২০২১ at ১০:০৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বাট্রি/জআ