আজও নিশ্চিত হওয়া গেল না ৯/১১র প্রকৃত দায়ী কারা

আমেরিকার ইতিহাসে একটি কালো দিন আজ।  তবে কী ঘটেছিল সেদিন আর এই হামলায় কারা জড়িত ছিল বা কারা এই হামলায় লাভবান হয়েছে সে বিষয়টি এখনও বিশ্ববাসীর অজানা। ইতিহাসের পাতায় যা ৯/১১ নামেই চিহ্নিত।

আমেরিকা এবং তার মিত্ররা যদিও হামলার জন্য ওসামা বিন লাদেনকে অভিযুক্ত করে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু সঠিক বিচার এবং প্রকৃত দায়ীদের আজও চিহ্নিত করতে পারেনি আমেরিকা আর তার মিত্ররা। বার বার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে। আদালতের বিচার কাজ প্রভাবিত হয়েছে এমনকি বিচারের নামে চলেছে দীর্ঘসূত্রিতা।

গত কয়েকদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই এই মর্মান্তিক ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি দ্রুততম সময়ের ভেতরে এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটনের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও আগেই আমেরিকা এবং তার মিত্ররা ঘটনার দায় মুসলমানদের উপর চাপিয়ে একতরফা বিচার শেষ করেছে। ঘটনার পর পরই আফগানিস্তানে ন্যাটো অভিযান চালিয়েছে। তারা সেদেশটি দখল করেও নিয়ে তাতে কুড়ি বছর ধরে অবস্থান করেছে। যদিও চলতি বছরের আগস্টে নিজেদের সব সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রশ্ন? আদতে সেদিন যে মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছিল তার দায় কার? যাকে মূল আসামি বানানো হয়েছিল সেই ওসামা বিন লাদেনকে তস্করের মত অপহরণ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই সেদিন লাদেনকে বলির পাঠা বানানো হয়। প্রকৃত সন্ত্রাসীদের বাঁচাতেই এই কৌশল নেওয়া হয় বলে অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন। ঘটনার পরপরই আমেরিকা লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে আফগানিস্তানে সেনা অভিযান চালায়। যদিও সেখানে লাদেনকে তারা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। এরপর লাদেনকে একবিশ্বস্ত সহকর্মীর বিশ্বাসঘাতকতায় পাকিস্তান থেকে আটক করা হয়। শেষ সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় লাদেন নিজেকে নির্দেষ বলে দাবি করলেও তাকে বাঁচিয়ে রাখার সৎসাহস দেখাতে পারেনি আমেরিকা এবং তার মিত্ররা। কিন্তু রহস্য থেকেই যায়।

আজ সেই ভয়াল দিন। বিশ বছর আগে আমেরিকায় চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয় নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে, যে ঘটনায় নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। এই হামলা ছিল শতাব্দীর অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ একটি হামলা। শুধু আমেরিকানদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়।

কী ঘটেছিল সেদিন? ছিনতাইকারীরা ছোট ছোট দলে পূর্ব আমেরিকার আকাশপথ দিয়ে ওড়া চারটি বিমান একইসাথে ছিনতাই করে। তারপর বিমানগুলো তারা ব্যবহার করে নিউইয়র্ক আর ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আঘাত হানার জন্য বিশাল ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র হিসাবে। দুটি বিমান বিধ্বস্ত করা হয় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে।

প্রথম বিমানটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করা হয় এর অল্পক্ষণ পর, সকাল ৯টা ৩ মিনিটে।দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির উপরতলায় মানুষজন আটকা পড়ে যায়। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুন্ডলী। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে।

তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দফতরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে ছিল আমেরিকান প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশাল এই সদর দফতর পেন্টাগন ভবন। এরপর, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার এক মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়।ধারণা করা হয় ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনের ওপর আঘাত হানতে চেয়েছিল।

কত মানুষ মারা গিয়েছিল? এসব হামলায় সব মিলিয়ে মারা গিয়েছিল ২,৯৭৭ জন। এই হিসাবের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী অন্তর্ভুক্ত নেই। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল নিউইয়র্কের লোক।চারটি বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুর প্রত্যেকে মারা যানটুইন টাওয়ারের দুটি ভবনে মারা যান ২,৬০৬ জন – তাৎক্ষণিক ও পরে আঘাত থেকেপেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জনসর্বকনিষ্ঠ নিহতের বয়স ছিল দু’বছর। নাম ক্রিস্টিন লি হ্যানসন।

তার বাবা মায়ের সাথে সে একটি বিমানের যাত্রী ছিল।নিহত সর্ব জ্যেষ্ঠ ব্যক্তির নাম রবার্ট নর্টন। তার বয়স ছিল ৮২। তিনি ছিলেন অন্য আরেকটি বিমানে এবং তার স্ত্রী জ্যাকুলিনের সাথে তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। প্রথম বিমানটি যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন ভেতরে আনুমানিক ১৭ হাজার ৪০০ জন লোক ছিল। নর্থ টাওয়ারের যে অংশে বিমান আঘাত করে, তার উপরের কোন তলার মানুষই প্রাণে বাঁচেনি।

তবে সাউথ টাওয়ারে যেখানে বিমান আঘাত করে, তার উপরের অংশ থেকে ১৮ জন প্রাণ নিয়ে বেরুতে পেরেছিল। হতাহতের মধ্যে ৭৭টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ ছিলেন।নিউইয়র্ক শহরে যারা প্রথম ঘটনাস্থলে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় দৌড়ে যান, তাদের মধ্যে মারা যান ৪৪১ জন। হাজার হাজার মানুষ আহত হন, যারা পরে নানাধরনের অসুস্থতার শিকার হন। যেমন দমকলকর্মীদের অনেকে বিষাক্ত বর্জ্যের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আরো পড়ুন :
রাজশাহীতে শিবিরের সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার
মামলা বাজদের হাত থেকে মুক্তি পাব কী? কাহালু সংবাদ সম্মেলনে বললেন রেজাউল

মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী: বিশ বছর আগের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে, টুইন টাওয়ারে এক নজীরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ১৫ জন ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তাদেরই একজন ছিলেন ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী। কাজ করতেন তিনি টুইন টাওয়ারের একটি টাওয়ার ভবনে অবস্থিত ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের এক নামী রেস্তোরাঁয়।

ওই সন্ত্রাসী হামলায় রেস্তোরাঁর আরও ৮৮জন সহকর্মীর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলেন চৌধুরী। স্লাাহউদ্দিন চৌধুরীকে হারানোর কষ্ট স্ত্রী বারাহীন আশরাফী গত বিশ বছর ধরে অনেকটা একাই বয়ে বেড়াচ্ছেন-গণমাধ্যম এড়িয়েই চলছিলেন তিনি। তবে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। স্বামী হারানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তান জন্ম দেওয়া, মুসলিম পরিচয়ের কারণে বিদ্বেষের শিকার হওয়া, সন্তান পালনের জন্য তুলনামূলক কম ব্যস্ত একটি রাজ্যে স্থানান্তরিত হওয়া- গত দুই দশকে এমন নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

তারপরেও যে প্রশ্নটি এখনো সামনে আসে সেটি হলো এতবড় একটি আক্রমণের পূবার্ভাস কেন বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা সিআইএ, তা আগে থেকে জানতে পারল না। তবে কি এটি তাদের ব্যর্থতা নাকি নিজেদের ইচ্ছে পূরণের হীন কৌশল! যাতে সহজেই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদেরকে মুক্ত রাখা যায়? এপ্রশ্নের জবাব কোনদিনই মিলবে না কারণ, আমেরকিা নিজেরাই সেদিন অগ্রিম বিচার করে দায় চাপিয়েছে লাদেনের ঘাড়ে। যে অপরাধে তাকে সভ্য আইনের পাশ কাটিয়ে হত্যা করতেও তাদের হাত কাঁপেনি।

সেপ্টেম্বর  ১১.২০২১ at ১০:২০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সম/রারি