চৌগাছা বেলেমাঠ গ্রামে একটি দর্গাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দিনের প্রাক মেলা

যশোরের চৌগাছা পৌরসভার বেলেমাঠ গ্রামে একটি দর্গাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক দিনের মেলা। প্রতি বছর বলুহ মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী চলা এই মেলাতে ভাল বেচাকেনা হওয়ায় ব্যবসারীরা বেজায় খুশি। বলুহ মেলার এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া এই মেলাকে স্থানীয়রা প্রাক বলুহ মেলা বলে আখ্যায়িত করেন।

চৌগাছা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের জিয়লগাড়ী বেলেমাঠ গ্রামটির মাঝা মাঝি স্থানে একটি দর্গার অবস্থান। এই দর্গাকে ঘিরে প্রতি বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবারের আগের মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় মেলা। দর্গার পাশে খালি মাঠে সকাল থেকেই হাজির হতে থাকেন নানা ধরনের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে শিশু খেলনা, প্রসাধনী আর মিষ্টি মিঠাইয়ের ব্যাপক সমারোহ ঘটে।

মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে মেলা চত্তরে যেয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা ছাড়াও দুর দুরান্ত থেকে সব বয়সের মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। তবে মেলায় শিশু কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বিভিন্ন জেলা হতে ব্যবসায়ীরাও মেলাতে আসতে ভুল করেনি। সারা দিনে ব্যবসায়ী যা বিক্রি করেছেন তাতে মোটামুঠি খুশি। এখন অপেক্ষায় আছেন বলুহ’র মুল মেলাতে অংশ নেয়ার জন্য।

এ সময় কথা হয় সুদুর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি থেকে আসা প্রসাধনী ব্যবসায়ী আলম হোসেনর সাথে। তিনি বলেন, গত দুই বছর কোন মেলা না হওয়ায় তারা বেশ কষ্টে দিন পার করেছি। এ বছর বলুহ মেলা হবে সেই আশায় আগে ভাগেই চলে এসেছি। বলুহর মুল মেলা শুরুর আগে বেলেমাঠ গ্রামে এই মেলায় বেচাকেনা করে এক সপ্তাহ পর হাজরাখানা গ্রামে বলুহ মেলায় তারা অংশ নিবেন বলে জানান।

একই কথা বলেন, নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার শিশু খেলনা ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া, আলমগীর হোসেন, সুধাংশু বসু, বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলার শরিফুল ইসলাম। এছাড়া স্থানীয় মিষ্টি ব্যবসায়ী হরেন নাথ, চটপটি ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন বলেন, বেলেমাঠ গ্রামে দর্গাকে ঘিরে একদিনের মেলা হয়। প্রতি বছর আমরা এখানে মালামাল বিক্রির জন্য আসি। এ বছর সকাল থেকেই মানুষের বেশ উপস্থিতি বেচাকেনাও ভাল হয়েছে।

পৌরসভার সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর স্থানীয় বাসিন্দা সাবিনা খাতুন বলেন, এই মেলা হচ্ছে আমাদের প্রানের মেলা। বছরের পর বছর ধরে মেলা হলেও করোনার কারনে গত দুই বছর হয়নি, এবছর মেলা হওয়ায় সকলেই খুশি।

দর্গায় আগত বলুহ ভক্ত পাবনা জেলার সদর উপজেলার রিংকু বলেন, আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই বলুহ মেলাতে আসি, মাজার ও দর্গায় রাত যাপন করি। বলুর ভক্ত তাই ভালবাসার টানেই প্রতি বছর চলে আসি।

দর্গার সার্বিক তত্বাবধানে থাকা হামজার আলী বলেন, বাবা দাদাদের কাছে শুনেছি, পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ) সময় পেলেই বেলেমাঠ গ্রামের বর্তমান মেলার উত্তর পাশে নিরিবিলি স্থানটিতে এসে বসতেন। তার বসা স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে দর্গা। ছোট বেলায় দেখেছি, স্থানীয় বাসিন্দা মরহুম লুৎফর ফকির এই দর্গা দেখাশুনা করতেন। তার মৃত্যু হলে দর্গার পাশেই দাফন করা হয়।

আরো পড়ুন :
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানো যার সখ
৩ বছরের চার্জশীটভুক্ত আসামী ইঞ্জিনিয়ারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না আরডিএ চেয়ারম্যান!

এরপর থেকে মূলত আমি দর্গা দেখাশুনা করছি। দর্গাকে ঘিরে প্রতি বছর এই দিনে একদিনের মেলা বসে, যেখানে সব বয়সের মানুষের আগমন ঘটে। মেলা পরিচালনার জন্য নেই কোন কমিটি এমনকি দেখা শুনার জন্যও কোন লোক নেই, তারপরও দিনটি এলে নিজের থেকেই সকলে আসেন ঘুরাফেরা করেন পরে চলে যান।

সেপ্টেম্বর  ০৭.২০২১ at ২০:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোনা/রারি