গৃহকর্মীর বরাদ্দ পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিজের ভাইকে দিলেন চেয়ারম্যান!

অসহায় এক নারীর নামে বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিজের ভাইকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এটি এম শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এছাড়া উপহারের ঘরের বিনিময়ে মাহফুজা বেগম নামে আরেক অসহায় নারীর কাছ থেকে সরকারের অনুদান হিসেবে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীন একটি ঘর বরাদ্দ পান উজানটিয়া নবীর পাড়া ৭নং ওয়ার্ডের মৃত গোলাম ছোবাহানের স্ত্রী বুতিজা বেগম। পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের গেজেট অনুয়ায়ী, উপহারের ঘরটি বুতিজা বেগমের মালিকাধীন ২৯১ খতিয়ানের ৩৪৫৭ দাগের ৮ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করার কথা। কিন্তু ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৯১ খতিয়ানের ৩৪১৬ দাগের জমিতে। ঘরটি শহিদুল ইসলামের তৃতীয় ভাই আলমগীর মোহাম্মদ সেলিমের দখলে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা করে উপহারের ঘরটি তার ভাইকে দিয়ে দেওয়ার পর প্রতিকার না পেয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন ভুতিজা বেগম। এর প্রায় পাঁচমাস পর গত বছর তার মৃত্যু হয়। তবে ভুতিজা বেগমের মেয়ে প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে, মাহফুজা বেগম নামে আরেক নারীর অভিযোগ, তার নামে বরাদ্দ হওয়া উপহারের ঘর অন্য আরেকজনকে দিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী মাহফুজা বেগম বলেন, সরকারি অনুদানের ৫০ হাজার টাকার একটি চেক উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে দেওয়া হয়। তার ছেলে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে সেখানে উপস্থিত হন চেয়ারম্যান শহিদ। তার জন্য বরাদ্দ হওয়া ঘরটি টাকা না দিলে আরেকজনকে দিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পুরা টাকা নিয়ে নেন তিনি। অসুস্থ ও মৃত্যু পথযাত্রী উল্লেখ করে টাকা ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ডে পরিবারের পাশাপাশি বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। চেয়ারম্যানের বড় ভাই এম মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভুতিজা বেগম ছোট বেলা থেকে আমাদের বাড়িতে কাজ করত। আমার বাবা তাকে বিয়ে দেন। মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে একটা ভিটাও তাকে লিখে দেন।

ভুতিজা বেগম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেয়ারম্যানের বাড়িতে কাজ করে খেতেন উল্লেখ করে তার ‘উপহারের ঘর’ কেড়ে নিয়ে ভাইকে দেওয়ার বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না বলে জানান মিসবাহ উদ্দিন। একইভাবে আরেক অসহায় নারী মাহফুজা বেগমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত আছেন বলেও জানান।

উজানটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম বলেন, এক শহিদ চেয়ারম্যানের কারণে পুরা সরকার ও আওয়ামী লীগের বদনাম হচ্ছে। চেয়ারম্যান সাহেব শুধু যে তার বাড়ির কাজের বুয়ার উপহারের ঘর তার ভাইকে দিয়ে দিয়েছেন বা অসহায় মাহফুজা বেগমের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তা নয়। উপহারের ঘর নিয়ে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম রীতিমতো বাণিজ্য করেছেন অভিযোগ করে তোফাজ্জল করিম বলেন, দক্ষিণ উজানটিয়া ৪ জনকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে তারা সবাই কোটিপতি। তাদের দুইজন প্রবাসী আর দুইজন লবণ ব্যবসায়ী। তাদের কাছ ৭০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান, যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।

এর আগে জলমহল দখল করে হ্যাচারি ও মার্কেট নির্মাণ এবং করোনাকালে রাতের আধাঁরে মাতামুহুরী খরস্রোতা নদী থেকে উঁজানটিয়ার হাজারও পরিবারের সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসানোর অভিযোগ ওঠে এ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী সব অভিযোগই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভুতিজা বেগম আমাদের সবাইকে কোলেপিঠে মানুষ করেছেন। মৃত্যুর পর তার ঘরটি আমি ভাড়া নিয়েছি।

এ ছাড়াও মাহফুজা বেগমের কাছ থেকে টাকা নেননি দাবি করে টাকার বিনিময়ে কোনো কোটিপতিকে উপহারের ঘর দেননি বলে জানান তিনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে ঘরে বাইরে নানাভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরো পড়ুন :
সিলেটে উপনির্বাচন, ১৪৯ কেন্দ্রের সব ক’টিতে জয়ী নৌকার প্রার্থী
পিরোজপুর বাজারে ৩ কেজি ওজনের ইলিশ

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলামিন পারভেজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেপ্টেম্বর  ০৫.২০২১ at ১২:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ এসএমজু/রারি