স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার উদ্যোগ

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদেরও করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হবে।

দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকাদানের উদ্যোগ নেওয়া হলো। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, বিশ্বের ১৮টি দেশ শিশুদের করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। কয়েকটি দেশে শিশুদের ওপর টিকার পরীক্ষা চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলে দেশে প্রায় এক কোটির মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এসব শিক্ষার্থীকে টিকা দিতে হলে দুই কোটি ডোজের প্রয়োজন। এসব শিক্ষার্থীকে দিতে হবে ফাইজার অথবা মডার্নার টিকা। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, ফাইজারের টিকার ১০ লাখ ডোজের মতো সরকারের কাছে মজুদ রয়েছে। আরও ৫১ লাখ ডোজ চলতি মাসেই আসবে। এর মাধ্যমে ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। সরকারিভাবে ফাইজার ও মডার্নার টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

অপর একটি সূত্র বলছে, শুরুতে নবম, দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে। এই চার শ্রেণি মিলে ৩০ লাখের বেশি হবে না। চলতি মাসে আসা ফাইজারের টিকার মাধ্যমে তাদের টিকাকরণ সম্ভব হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি পরীক্ষা পরিদর্শনে গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘১৮ বছরের ওপরের বয়সীদের যে কোনো টিকা দেওয়া যাবে। তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও নির্দেশনা রয়েছে। যেসব দেশ শিশুদের টিকা দিচ্ছে তাদের পদ্ধতির ওপর লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি টিকা পেয়েছেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ১৮ বছরের ওপরের বয়সী অনেক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। মেডিকেল শিক্ষার বাইরে অন্য শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে আজ রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি।

পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, আগামী সপ্তাহে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হচ্ছে। সংগত কারণেই স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাকরণের প্রসংগটি চলে আসছে। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। সরকার স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে চায়।

চীনের শিশুদের ওপর সিনোফার্মের টিকার ট্রায়াল চলছে। চীনের পক্ষ থেকে ওই ট্রায়ালে সন্তোষজনক ফল পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিনোফার্ম কার্যকর ফল দিলে ওই টিকাও শিশুদের ওপর প্রয়োগ করা যাবে বলে জানান মন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, প্রথমে একাদশ, দ্বাদশ এবং নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। কারণ এসব শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সুতরাং তাদের আগে টিকাকরণ প্রয়োজন। এরপর টিকা পাওয়া সাপেক্ষে অন্যদের দেওয়া হবে।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, চীন থেকে সিনোফার্মের আরও ছয় কোটি ডোজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতি মাসে দুই কোটি ডোজ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে ছয় কোটি ডোজ আসবে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের আরও ১০ কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা কেনা হবে। একই সঙ্গে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায়ও টিকা আসবে।

দেশে দেশে শিশুদের টিকাদান: বিশ্বে সবার আগে গত মে মাসে ১২ বছর থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের করোনার প্রতিষেধক টিকার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে দেশটিতে পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের শরীরেও ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। এরপর জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের শরীরে ফাইজারের টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ১৮টি দেশে শিশু-কিশোরদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে।

এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ১ জুন থেকে সিঙ্গাপুর ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। গত জুনের সিনোভ্যাক টিকাকে তিন থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করে চীন। সম্প্রতি চীনের তৈরি দুই টিকা সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাককে ১৮ বছর ও তার ওপরের বয়সীদের ওপর প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিউবা দুটি টিকা শিশুদের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করছে। সম্প্রতি ভারতও জাইকভ-ডি নামে তিন ডোজের একটি টিকা পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ওপর প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে মডার্না কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী চার হাজার মানুষের ওপর মডার্নার টিকা প্রয়োগে ৯৩ ভাগ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ছয় থেকে ১১ বছর বয়সীদের ওপর মডার্না ও ফাইজারের টিকার ট্রায়াল চলছে।

আরো পড়ুন :
পিরোজপুর বাজারে ৩ কেজি ওজনের ইলিশ
সিলেটে উপনির্বাচন, ১৪৯ কেন্দ্রের সব ক’টিতে জয়ী নৌকার প্রার্থী

তবে গতকাল শনিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের টিকাবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ওপর টিকা প্রয়োগের সুপারিশ এখনই করছে না। টিকা গ্রহণের পর হৃদরোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কমিটির পক্ষ থেকে সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ সাত দেশে করোনায় শিশু মৃত্যুহার নিয়ে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গড়ে প্রতি লাখে শিশু মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। সুতরাং শিশুদের টিকার আওতায় আনা না গেলে কোনো দেশেই শতভাগ হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব নয়। মূলত এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশে ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সেপ্টেম্বর  ০৫.২০২১ at ১০:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সম/রারি