খাজনা আদায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভেলকিবাজী

নওগাঁর বদলগাছীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের যোগসাজছে কোলা ইউনিয়নের ভান্ডারপুর হাটের খাস আদায় গোঁপন রেখে ইজারাদার না হয়েও মোছা. আয়েশা সিদ্দিকা দিং ইজারাদার নামীয় রশিদ দিয়ে খাজনা আদায় করছে। এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের চোঁখে ধোকা দিতেই এই প্রথা অবলম্বন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে ভান্ডারপুর হাটে গিয়ে দেখে ও শুনে জানাযায়, সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও রবিবার ভান্ডারপুর বসে হাট । প্রতি হাটে প্রায় লাখ টাকার খাজনা আদায় হয়ে থাকে। হাটে খাজনা আদায় করছে আয়েশা সিদ্দিকা দিং এর লোকজন । ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত খাজনা। হাটের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে খাজনা আদায়কারী বেদারুল নামীয় একজন ব্যক্তি। খাস হাটে অতিরিক্ত খাজনা কেন নেওয়া হচ্ছে বলে আদায়কারী বেদারুলের সাথে কথা বললে প্রথমে তিনি বলেন, আমরা হাটটি ইজারা নিয়েছি তাই আমাদের ইচ্ছে মতোই খাজনা আদায় করবো।

আমরা দুই তিন দিন আগে জানতে পারি যে এই হাটে খাস আদায় হচ্ছে তাহলে খাস আদায় হাটে ব্যক্তি ইজারাদারের রশিদ কেন ব্যবহার হচ্ছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খাস আদায়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন আয়েশা সিদ্দিকা দিংদের নিকট থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। পহেলা বৈশাখ থেকে তাদেরকে টোল আদায়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন ও তার পরামর্শে ব্যক্তি রশিদে খাজনা আদায় করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইজারাদারের আরেক পার্টনার বলেন, এই হাট নিতে নগদ ২৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে ইউএনওকে। আর এই হাটটি পেতে সংশ্লিষ্টদের দিতে হয় আরো প্রায় ৭ লাখ টাকা। এই হাটটি নিতে আমাদের মোট খরচ হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা।

জানাযায়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দের জন্য ভান্ডারপুর হাট ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্রর ক্রয় করেন ৪/৫ জন ব্যক্তি। আর সেই সব ক্রয়কৃত সিডিউল আওয়ামীলিগের এক নেতা জমা নিয়ে নেন। পরে ঐ নেতা প্রায় ১৪ লাখ টাকা ইজারা মুল্য দিয়ে মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা দিং এর নামে মাএ একটি দরপত্র দাখিল করে। সরকারী মুল্যের চেয়েও ৫০% এর কম মূল্য দরপত্রে দেওয়ায় ও একটি মাত্র দরপত্র দাখিল হওয়ায় দরপত্রটি বাতিল করা হয়।
এরপর ঐ হাটের জন্য আর কোন দরপত্র আহব্বানে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন।

পরে কোন দরপত্র আহব্বানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন নিজেই আয়েশা সিদ্দিকা দিংদের নিকট থেকে খাস আদায়ের জন্য অগ্রিম ২৩ লাখ টাকা নিয়ে ১৪২৮ সনের পহেলা বৈশাখ থেকে খাস আদায়ের দায়িত্ব দেন তাদেরকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজশে খাস আদায় গোঁপন করে আয়েশা সিদ্দিকা দিং নিজেদেরকে ইজারাদার হিসেবে রশিদ বই ছাপিয়ে অবৈধ্যভাবে ভান্ডাপুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছে।

ইউনিয়ন হাট কমিটির সভাপতি ও কোলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম (স্বপন) এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে ১৪২৮ বঙ্গাব্দের জন্য প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভান্ডাপুর হাট ইজারা নেওয়ার জন্য মোছাঃ আয়েশ সিদ্দিকা দিং প্রায় ১৪ লাখ টাকা ইজারা মূল্য দিয়ে মাএ একটি দরপত্র দাখিল করে। কিন্তু সরকারী মূল্যের চেয়ে কম মুল্য দেওয়ায় এবং একটি মাত্র দরপত্র দাখিল হওয়ায় বদলগাছী উপজেলা হাট-বাজার ইজারা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করেন।

জেলা প্রশাসক এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ৩০ লাখ টাকা নির্দ্ধারণ করে দেন বলে শুনেছিলাম। এরপর থেকে ইজারাদারের মাধ্যমেই হাটে টোল আদায় করা হচ্ছে বলে আমি জানি। পরে গত কুরবানীর ঈদের ৩/৪ দিন আগে পরিষদের সদস্যদের বকেয়া সম্মানী ভানা দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রধান অফিস সহকারী রেজাউল ইসলাম কাছে চেক নিতে গেলে তিনি বলেন, ভান্ডাপুর হাটে খাস আদায় করা হচ্ছে তাই এই পর্যন্ত অল্প কিছু টাকা জমা হয়েছে। আপনি ইউএনও স্যারের কাছে যান। এরপর ইউএনও আলপনা ইয়াসমিনের নিকট গেলে তাকে বলেন, ভান্ডাপুর হাট খাস আদায় হচ্ছে তাই এখন ৪৬% টাকা দেওয়া যাবে না বলে তাকে জানান। এরপর থেকে তিনি অবগত হয়েছেন ভান্ডারপুর হাট খাস আদায়ে চলছে। কারা এই খাস আদায় করচ্ছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আয়েশা সিদ্দিকা দিং আদায় করছে।

আরো পড়ুন:
কৃত্রিম সংকটে মিলছে না প্যারাসিটামল ট্যাবলেট
ভুয়া ডিএসবি পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক-২

কোলা, আধাইপুর ও বদলগাছী সদর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শ্রী রনজিৎ কুমারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ভান্ডাপুর হাটে খাস আদায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। এছাড়াও তিনি জানান ইউএনও স্যার কার দ্বারা খাস আদায় করাচ্ছেন তাও তিনি জানেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ২৩ লাখ টাকা আয়েশা সিদ্দিকা দিংদের নিকট থেকে জামানত হিসেবে নিয়ে সরকারী হিসাব নম্বরে রেখেছি এবং খাস আদায়ের জন্য তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। আয়শা সিদ্দিকা দিং ইজারাদার লিখে রশিদ বই ছাপিয়ে তা দিয়ে টোল/ খাজনা আদায় করছে কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তাদের ঐরশিদ বইয়ে খাস আদায়ের সিল দিতে বলেদিবো। ২৩ লাখ টাকা জামানত নেওয়ার পর প্রতি হাটের খাস আদায়ের টাকা সরকারী কোষাগারে কিভাবে জমা করছেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর প্রদান করেননি।

কোলা ইউনিয়নের সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, কোলা ইউনিয়নের দুইটি হাট সেটি হলো কোলা ও ভান্ডারপুর কিন্তু বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই উপজেলায় যোগদানের পর কোন নিয়মনিতীকে কোয়াক্কা না করে এই দুইটি হাট নিয়ে ভেলকিবাজীর মতো খেলা করেছেন। আর এই দুইটি হাট টেন্ডার না দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য খাস আদায় করছে। আর এতে করে এই ইউনিয়নের হাট-বাজারের উন্নয়ন থমকে গেছে রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে এলাকার উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয় । তারা এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আগষ্ট ০৩.২০২১ at ১৮:১১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সরস /জআ