সুন্দরবন উপকূলবর্তী পাইকগাছায় বন্ধ হচ্ছেনা বাল্যবিয়ে

খুলনার পাইকগাছায় কোনভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছেনা বাল্যবিবাহ। প্রতিনিয়ত নানা অযুহাতে কখনো নোটারী পাবলিক আবার কখনো জালিয়াতি করে মেয়ের বয়স বাড়িয়ে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বয়স কম থাকায় আইনী ঝামেলা এড়াতে কখনো আবার ভিন্ন এলাকায় নিয়ে সারা হচ্ছে বিয়ের কাজ। এসব ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বিভিন্ন সময় বর-কনের পিতা আবার কখনো পুরোহিতদের অর্থদন্ড দিলেও থামছেনা অবৈধ কার্যক্রম।

সাম্প্রতিক সময়ে এনিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্তে পাইকগাছা নোটারী পাবলিক থেকে কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের নির্দেশনা থাকায় এবার জেলা সদর থেকে সারা হচ্ছে এফিডেভিটের কাজ। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মাবরম্বীদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই সনতনীরাও।

গত ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় উপজেলার হিতামপুর গ্রামের বাসুদেব বিশ্বাস তার অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়েকে বিয়ে দেন একই উপজেলার হরিঢালী গ্রামের নারদ বিশ্বাসের ছেলের সঙ্গে।

এ ঘটনায় ঐ রাতেই বর-কনের পিতা ও বিয়ের সংশ্লিষ্ট পুরোহিতকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের তোকিয়া গ্রামের মো. তরিকুল মোড়ল তার ১০ বছরের শিশুকে খুলনা জর্জ আদালতের জনৈক আইনজীবির সহায়তায় নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে উপজেলার কপিলমুনির বিরাশি গ্রামের মো. আকবর গাজীর ছেলে মো. রুস্তম গাজীর সাথে বিয়ে দেন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর নির্দেশে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন, আনসার কমান্ডার আবু হানিফ, ইউনিয়ন লিডার মো. ফয়সাল হোসেন ও ভিডিপি সদস্য মো. আব্দুস সামাদ বিয়ের বরসহ বরের পিতা ও কনের পিতাকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করেন।

পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহরিয়ার হক মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় এবং আইন বহির্ভুত নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে “বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” মোতাবেক মেয়ের পিতাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। যার মামলা নং ২৬৬/২০২১, তারিখঃ ৩০/০৭/২০২১ এবং ছেলেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন যার মামলা নং ২৬৭।

আরো পড়ুন:
শাটডাউন বাড়ানোর সুপারিশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের
মাছ ধরার উৎসবে মেতেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা

এদিকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা পালনে নির্দেশনা দেওয়ায় এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্তে প্রতিটি ভ্রাম্যমান আদালতে আসামীদের আটকে আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক, কমান্ডার ও সদস্যদের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। তাদের সক্রিয়তায় এলাকায় ভীতি বাড়লেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছেনা বাল্যবিবাহ।

প্রসঙ্গত, এক সময় অস্পৃশ্য ও অন্তুজ জনগোষ্টীর মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবনতা লক্ষ্য করা গেলেও এখন তাদের অধিকাংশ পরিবারে শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়ায় তারা সেই বলয় থেকে খানিকট বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ইসলামধর্মাবলম্বী পরিবারের লোকেরা।

এব্যাপারে সচেতন এলাকাবাসী বাল্যবিবাহের কারণ চিহ্নিতকরণ ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহনে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দাবি জানান।

জুলাই ৩১.২০২১ at ১৮:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/শন/জআ