কি গরম বাহে,এই গরমোতে কারেন্ট খালি আইসে আর যায়

লোডশেডিং কথা জানতে চাইলে মুদি দোকানদার আবুল কাশেম(৫৫) বলেন, গত কয়েক দিন ধরি (ধরে) সেই(প্রচন্ড) গরম পোরছে(পরছে)। কারেন্টও তেমন থাকে না। কি গরোম(গরম) বাহে,এই গরমোত (গরমে) কারেন্ট খালি আসে আর যায়। হামরা (আমরা) গুলা(গুলো) চরম ভোগান্তিতে কোনো(কোন) রকম ব্যবসা করবেইছি( করিতেছি)। এমনিতে লকডাউন চলবাইছে (চলছে)। বিকাল তিনটায় হইলে (হলে)আবার দোকান বন্ধ করা খায়( করতে হয়)।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক দিকে প্রচন্ড তাপদাহ অন্য দিকে পল্লীবিদ্যুতের দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমের শিশু-বৃদ্ধরা সব চেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়েছেন। প্রচন্ড তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যুতের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেও পল্লীবিদ্যুতের দেখা মিলছে না।

ফুলবাড়ী উপজেলায় গত এক থেকে দেড় মাস ধরে পল্লীবিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশিডিং থাকায় জনজীবন বিপর্যয়ে। মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রচন্ড তাপদাহ ও বিদ্যুত না থাকায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড তাপদাহ থেকে একটু স্বস্তি পেতে কেউ কেউ গাছের তলায় বাঁশের টংয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকে আবার ঘন ঘন ঠান্ডা পানিতে গোসল করছেন এবং ঠান্ডা পানি পান করছেন। আবার অনেক আমন চাষী প্রচন্ড তাপদাহের মাঝেও জমিতে আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সেই সাথে অনেক আমন চাষী আবার সেচ-মোটর চালু করার জন্য কারেন্টের অপেক্ষাও করতে দেখা গেছে। তীব্র তাপদাহে কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষের সমাগম কিছুটা কমেছে। প্রচন্ড গরম ও পল্লীবিদ্যুত না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধও রেখেছেন।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক হাশেম আলী ও ঈশা মিয়া জানান,গত কয়েকদিন ধরে যে তাপদাহ তা সহ্য করার মত নয়। বিশেষ করে পল্লীবিদ্যুতের যে অবস্থা সকাল থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের অপেক্ষা করছি। বিদ্যুত আসলেই সেচ মোটর চালু করে আমন খেতে পানি দিব। বিকাল হয়ে গেল তবুও কারেন্ট এলো না।

শাপলা রানী ও রুবিনা আক্তার বলেন, প্রচন্ড গরম পড়েছে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। প্রচন্ড তাপদাহে ঘরের মধ্যে থাকাই যায়না। প্রচন্ড গরমে গা জ্বলে। কারেন্ট আসে আর যায়। সোমবার সারাদিন কারেন্টের দেখা মেলেনি।

শিক্ষার্থী শতাব্দী রায় ও আঙ্গুরী খাতুন জানান, এমনিতে স্কুল বন্ধ। কারেন্ট (পল্লীবিদ্যুত) না থাকায় আমরা প্রচন্ড গরমে পড়াশুনা ঠিকমতো করতে পারছি না। প্রায় এক মাস ধরে বিদ্যুতের খুবই সমস্যা। এতো ঘনঘন লোডশেডিং হলে আমরা পড়াশুনা করবো কি ভাবে?

কুড়িগ্রাম-লালমনিহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল জানান, ফুলবাড়ী সদরে বিদ্যুত আছে। গত কয়েকদিন আগে গ্রীডের সমস্যা হওয়ায় বিদ্যুত কম ছিল । এখন কোন সমস্যা নেই। তবে সোমবার সকালে উপকেন্দ্রের ৪ নং ফিডার ও ৩৭ নং খুঁটি ভেঙে পড়ায় ফুলবাড়ী সদরের বাহিরে সকাল থেকে বিদ্যুত ছিল না। কাজ চলমান আছে। আশাকরি সমস্যা কেটে যাবে।

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত কয়েকদিন থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত এরকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই সহকারী আবহাওয়াবিদ।