সাকিব ঝলকে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

বল হাতে ২ উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আজ (রবিবার) দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। এদিন পেন্ডুলামের মত দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। একবার বাংলাদেশ আবার জিম্বাবুয়ের দিকে। তবে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটিতে শেষ হাসি হেসেছে টাইগাররা। এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করে নিধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট খুইয়ে ২৪০ রান করে জিম্বাবুয়ে। জবাবে ৫ বল হাতে রেখে ৩ উইকেট জিতল টাইগাররা। এছাড়া এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। তবে এদিন টাইগার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ভিড়ে একাই লড়াই করেছেন সাকিব আল হাসান। তিনি ১০৯ বলে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে দলীয় ৪৬ রানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসকে হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। তামিম জিম্বাবুয়ের বোলার লুক জংওয়ের বলে সাজঘরে ফিরেন। তবে তামিমের উইকেটের জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে পয়েন্টের ফিল্ডার সিকান্দার রাজাকে। লুক জংওয়ের লেন্থ বল ব্যাকফুটে গিয়ে পাঞ্চ করেছিলেন তামিম। পয়েন্টে থাকা রাজা দুর্দান্ত গতিতে নিজের বামদিকে ঝাপিয়ে দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন। আউট হবার আগে ৩৪ বলে ২০ রান করেন তামিম। এরপর তাড়াহুড়ো করে খেলতে গিয়ে আউট হন লিটন। তিনি ৩৩ বলে ২১ রান করেন। লিটন আউট হবার পর মাঠে নামেন মিঠুন। কিন্তু তিনি লুক জংওয়ের বলে ব্যক্তিগত ২ রান করে আউট হন। দলীয় ৫০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে সফরকারীরা। এরপর দলের হাল ধরেন সাকিব ও মোসাদ্দেক। তারা দুজন ২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। কিন্তু নিজের ভুলে মোসাদ্দেক রান আউট হয়ে ফিরেন সাজঘরে। রিচার্ড এনগাবারার বল যায় উইকেটরক্ষক চাকাবার হাতে। বল ঠিকমতো গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি চাকাবা। ওই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মোসাদ্দেক ১ রান নেওয়ার জন্য ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু চাকাবা দ্রুত রিকোভার করে সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভাঙেন। ৯ বলে ৫ রান করে মোসাদ্দেক ফেরেন সাজঘরে। ফলে ৭৫ রানে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। এরপর দলকে উদ্ধার করে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব। তারা দুজনে ৫৫ রানের জুটি গড়ে রানের চাকা সচল রাখেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের পেসার মুজারাবানি ফের বাংলাদেশকে বিপদে ফেললেন। তার নতুন স্পেলের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২৫ রান করা মাহমুদউল্লাহ। তিনি আউট হলে একাই লড়াই করেন সাকিব। এমনকি সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯ তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে দলীয় ১৪৫ রানে তাড়াহুড়ো করে খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৬ রানে আউট হন মিরাজ। এরপর সাকিবকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন আফিফ। তিনি ভালো খেলার আভাস দিয়েও ১৫ রানে আউট হন।

বল হাতে ২ উইকেট শিকারের পর সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে ১০৯ বলে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে আজ টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া জিম্বাবুয়ে শুরুতেই উইকেট হারায়। তাসকিনের বাইরের বল খেলতে গিয়ে পয়েন্টে আফিফ হোসেনর হাতে ধরা পড়েন স্বাগতিক ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামওয়ে। ফেরার আগে মাত্র ১ রান করেন তিনি। এরপর জিম্বাবুয়েকে আরো চেপে ধরে টাইগার বোলাররা। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে বল তুলে দেন তামিম ইকবাল। পঞ্চম বলেই পান সাফল্যের দেখা। তাডিওয়ানাশে মারুনামিকে বোল্ড করে ফেরান সাজঘরে। সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল তাডিওয়ানাশের উইকেট ভেঙে দেয়। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ২ চারে ১৩ রান করেন তাডিওয়ানাশে। ৬ ওভারেই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে তৃতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়ে বেন্ডন টেলর ও চাকাবা প্রতিরোধ গড়েন। তাতে রান আসে অনায়েসে। তাদের জুটি ভাঙার উত্তর জানা ছিল সাকিবের।

১৬তম ওভারে সাকিব বোল্ড করেন চাকাবাকে। ৩২ বলে ২৬ রান করে ফেরেন জিম্বাবুয়ের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। দলীয় ১১১ রানে অধিনায়ক টেলরকে হারিয়ে ফের বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। তিনি ব্যক্তিগত ৪৬ রানে শরিফুলের বলে হিট উইকেটে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন। শরিফুলের লেন্থ বল আপার কাট করতে চেয়েছিলেন টেলর। ব্যাট-বলের টাইমিং হয়নি তাই এরপর শটের শ্যাডো প্র্যাকটিস করে ব্যাট নামাতে গিয়ে স্টাম্পে আঘাত করেন। বেলস পরে গেলে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আউটের আবেদন করেন। দুই অনফিল্ড আম্পায়ার নিজেদের মধ্যে কথা বলে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য চান। টিভি রিপ্লে দেখে টেইলরকে আউট দেন আম্পায়ার। এরপর মায়ার্স ব্যাট হাতে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু সাকিবের চমৎকার স্পিন ঘূনিতে ৩৪ রান করে মায়ার্স আউট হন। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে শরিফুলের বলে মাধভের ব্যক্তিগত ৫৬ রানে সাজঘরে ফিরেন। এরপর টোইগার পেসার সাইফউদ্দিনের ওভারে দুই চার মেরে শেষ দিকে রান বাড়াতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। কিন্তু প্রতিশোধ নিলেন এ ডানহাতি পেসার। তার শর্ট বল আপারকাট করতে গিয়ে টাইমিং মিস করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রাজা। ৪৪ বলে ৩০ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে শরিফুল শিকার করেছেন ৪ টি ও সাকিব ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন,সাইফউদ্দিন ও মিরাজ।