স্ত্রীর পর করোনায় মারা গেলেন সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন

সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ।

স্ত্রীর মৃত্যুর ১০ দিন পর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোরবার (১৮ জুলাই) রাত ১টা ৪০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি তিন ছেলে, চার মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ আত্মীয়-স্বজন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন নেতা আফাজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা আফাজ উদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৩ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য আলাদা দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের ঢাকায় নেয়া হয়। ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে। সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা গ্রহণের একপর্যায়ে মনোয়ারা বেগমকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। চারদিন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গত ৮ জুলাই সকালে মনোরায়া বেগম মৃত্যুবরণ করেন। সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ স্ত্রীর মৃত্যুর সময় ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থাও মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কান্ডারি অাফাজ উদ্দিন আহমেদের অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটায় গত পাঁচদিন আগে বিএসএমএমইউ থেকে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়ার পর ক্রমশ আরো অবস্থার অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। টানা ২৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর হেরে যান তিনি। স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের মৃত্যুর ঠিক ১০ দিন পর রোববার রাত ১টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এই সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন ঢাকা থেকে তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মহামারি করোনায় মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে বাবা-মাকে হারিয়ে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। পরিবারের পক্ষে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (১৭ জুলাই) রাত ৯টার দিকে অাফাজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে উপজেলাব্যাপী ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা পরিষদের সরকারি মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের মাইকে তার মৃত্যুর থবর ঘোষণা করা হয়। দলের অনেক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেন। এ নিয়ে পুরো উপজেলাবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। পরে তখন পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় তারা সেসব ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করে দেন। এদিকে রোববার ভোর রাতেই বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় অাত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আফাজ উদ্দিন আহমেদের রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। এখানকার আওয়ামী লীগের সাথে আফাজ উদ্দিনের নাম অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর একাধারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানকার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও সদালাপী এই নেতা তার পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণেই নিজ দলের বাইরেও সবার কাছে ছিলেন একজন গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আফাজ উদ্দিন আহমেদ এরশাদ সরকারের আমলে দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসন থেকে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি নিঃস্বর্থভাবে দল ও মানুষেের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম আসলেই যে নামটি সবার আগে আসে সেটিই হচ্ছে আফাজ উদ্দিন আহমেদ। তাকে দূরে রেখে এখানকার আওয়ামী লীগকে কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেন না। তারপরেও আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা দলের কুচক্রিরা অাফাজ উদ্দিন আহমেদকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার অপতৎপরতা চালিয়েছেন অনেকবার। কিন্তু তারা সফল হতে পারেননি। উপজেলার তারাগুনিয়ায় অাফাজ উদ্দিনের বাড়িতে বছর দশেক আগে শক্তিশালী বোমা হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় তিনি আহত হলেও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনাস্থলেই মারা যান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা তারাগুনিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ দুই বোমা হামলাকারী। বারবার দলের ভেতর কোন্দল সৃষ্টি করে তাকে বিতর্কিত করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। বারবারই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব চলে এসেছে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা আফাজ উদ্দিনের হাতে।