চৌগাছায় করোনায় মৃত হিন্দু বৃদ্ধার সৎকার করলেন মুসলমান যুবকরা

যশোরের চৌগাছায় করোনায় মৃত্যু হওয়া একজন হিন্দু বৃদ্ধার সৎকার করলেন মুসলিম যুবকরা। এদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত জোসনা রানী নামে একজন ৭০ বছরের হিন্দু বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে প্রায় ৪ ঘন্টা লাশটি সেখানেই পড়েছিল।

৩ সন্তানের মা জোসনা রানী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের মহল্লার মৃত নারায়ন কর্মকারের মেয়ে। স্বামী সন্তোষ কর্মকার আগেই গত হয়েছেন। আপন ভাইয়েরা চৌগাছা বাজারের সব স্বনামধন্য ব্যবসায়ি। মৃতের ছেলে ও একটি মেয়ে মায়ের লাশ দূর থেকে দেখলেও আপন ভাই বা সম্প্রদায়ের অন্য কাউকেই মৃতের সৎকারে দেখা মেলেনি। তাই সাম্প্রদায়িক সৎকারের রীতিনীতি না জানলেও শেষ পর্যন্ত মুসলিম যুবকরাই শ্বশানে জোসনা রানীর সৎকার করলেন।

সেদিন হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার নিলুফার ইয়াসমিন বললেন, জোসনা রানী শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মারা যান। মৃত্যুর পরে আমি তার ছেলেকে কয়েকবার ফোন করেছিলাম।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, জোসনা রানীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমরা তার ছেলেকে বলেছিলাম আরো ভাল চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে। কিন্তু সে বললো রোগীর সাথে থাকার মতো কেউ নেই। আর মৃত্যুর প্রায় ২ ঘন্টা পরেও পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেননি। পরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অগ্রযাত্রাকে জানানো হলে তারাই মৃতদেহটি নিয়ে সৎকার করেন।অবশ্য পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ বলয় চন্দ্র পাল বললেন,বিষয়টি দুঃখজনক। তবে মৃত্যুর বিষয়টি আমাদেরকে কেউ বলেনি।

উল্লেখ্য, গত বছর করনো মহামারি শুরুর পর এই “অগ্রযাত্রা” সংগঠনটি উপজেলা প্রশাাসনকে সার্বিক সহোযোগিতা করার পাশাপাশি এযাবত করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরন করা প্রায় ২০জনকে সৎকার করেছে। সংগঠনটির উপদেষ্টা পৌর মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন হিমেল,সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ি হাসিবুর রহমান হাসিব ,সাধারন সম্পাদক জাহিদসহ সদস্য হোমিও ডাক্তার ফয়সাল এবং হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক আলমরাই সর্বদা করোনায় মৃতদের সৎকার করে থাকেন।

সেই ঘটনার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জোসনা রানীর মৃত্যুর ৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও যখন পরিকারের কেউ লাশ নিতে আসেনি তখন সংবাদ আসে অগ্রযাত্রার কাছে। সভাপতি হাসিব পৌর মেয়র হিমেলের পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলি এনামুল হক এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করেন।

এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলি এনামুল হক ও চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজের সার্বিক সহোযোগিতায় হাসিব,জাহিদ,ফয়সাল এবং এ্যাম্বুলেন্স চালক আলমরাই (করোনায় মৃত লাশ বহনযোগ্য ব্যাগে ভরে) পৌরসভার পান্টিপাড়া শ্বশানে নিয়ে সৎকার করেন।মানুষ মানুষের জন্য কথাটি মাথায় নিয়ে ২০১৪ সালে “অগ্রযাত্রা”র যাত্রা শুরু হয়। মানুষের কল্যানে প্রথমে রক্তদান কর্মসূচি দিয়ে আরম্ভ করা সংগঠনটির খাতায় রক্ত দিতে ইচ্ছুক এমন মানুষের তালিকায় এখন ৮০০ জনের নাম।

জুলাই,১০.২০২১ at ২০:২৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমটি/এসআর