দৌলতপুরে লকডাউনের মাঝেও ভাইস চেয়ারম্যানের পশু হাট, অবশেষে ভেঙে দিল প্রশাসন

লকডাউনের মাঝেও চলা পশু হাটে অভিযানকালে ইউএনও শারমিন আক্তার হ্যান্ডমাইকে সবাইকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। ছবি: দেশ দর্পণ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে চলমান লকডাউনের মাঝেও সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে প্রভাব খাটিয়ে চালানো হচ্ছিল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের পশু হাট। অবশেষে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) পশুর হাটটি ভেঙে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউন অমান্য করে পরিচালিত ওই হাটে অভিযানের সময় ইউএনওর সামনেই স্থানীয় এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন ভাইস চেয়ােরম্যানের লোকজন।

করোনার বিস্তার রোধে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের মাঝেও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ অমান্য করে দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুরে পশু হাট চালিয়ে আসছিলেন হাটটির ইজারাদার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদ। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার স্থানীয় প্রশাসনের মদদে ও দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির তার পশু হাট চালাচ্ছিলেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম এ বিষয়ে অবগত হয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তাকে হাটটি বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার মথুরাপুর পশু হাটে অভিযান চালান। ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদের সঙ্গে সখ্য থাকলেও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালিয়ে হাটটি ভেঙে দিতে বাধ্য হন ইউএনও। ওই পশু হাটের পূর্ব নির্ধারিত দিন মঙ্গলবার সকাল সকালেই হাটের কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ গরু-ছাগল হাটে আনা হয়। জড়ো হন বিপুলসংখ্যক মানুষ। হাটটিতে অভিযান চালানোর সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের সামনেই ওই এলাকার সাংবাদিক নতুন প্রকাশিত দৈনিক আজকের পত্রিকার দৌলতপুর প্রতিনিধি তামিম আদনানের ওপর চড়াও হন ভাইস চেয়ারম্যানের লোকজন। তিনি সাংবাদিক, এই পরিচয় জানার পরই তাকে লাঞ্ছিত করা হয়।

লকডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে চলা পশু হাটে উপস্থিতির একাংশ। ছবি : দেশ দর্পণ

সাংবাদিক তামিম আদনান বলেন, পশু হাটে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের সময় আমি মথুরাপুরে কাঁচা বাজার করছিলাম। দূর থেকে ইউএনও ম্যাডামের গাড়ি দেখতে পেয়ে কাছে এগিয়ে যাই। অাকস্মিকভাবে অভিযানটি সামনে মিলে যাওয়ায় নিজের পরিচয় দিয়ে ছবি তুলি। সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও ম্যাডামের সামনেই ভাইস চেয়ারম্যানের লোকেরা আমার ওপর চড়াও হন। পরে সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হই। সাংবাদিক তামিম বলেন, অভিযানের সময় কাকতালীয়ভাবে আমি উপস্থিত হলেও তারা আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। তারা নিজেরাই এই মহামারির সময় অপরাধ করে কী কারণে উল্টো আমার ওপর চড়াও হলো তা আমার বোধগম্য নয়।

পশু হাটের ইজারাদার দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে গেল বছর এবং এ বছর মিলে হাট মালিকদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমার নামে হাট থাকলেও অংশীদার আছে এলাকার ৩০-৩৫ জন। এখানে প্রশাসন উপস্থিত হলে সবাই ধারণা করে সাংবাদিকই প্রশাসনকে ডেকে এনেছে। এ সময় কিছু তর্কবিতর্ক হয়। গরু ব্যবসায়ীরা বা উপস্থিত অনেকেই সাংবাদিকদের ওপর রাগান্বিত ছিল। আমি তাদের নিবৃত করে সরিয়ে দিয়েছি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার হাট মালিক ভাইস চেয়ারম্যানকে স্থানীয় প্রশাসনের মদদ দেয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, পশুর হাটটি চলছে জানা মাত্রই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত হাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে সাংবাদিকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। আমি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে থামিয়েছি।

এদিকে হাটে উপস্থিত গরু বিক্রেতারা বলেন, সারা বছরের স্বপ্ন থাকে কোরবানির ঈদের আগে ভালো দামে গরু বেচবো। কিন্তু করোনার জন্য হাট না চললে আমরা পথে বসে যাবো। অন্যদিকে করোনাকালের এই লকডাউন উপেক্ষা করে দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গা পশুর হাটও বসার খবর পাওয়া গেছে। সপ্তাহে একদিন (শুক্রবার) সেখানে হাটটি চালানো হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।