লকডাউনে এনজিও’র কিস্তির চাপে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

‘বাইরে গেলে পুলিশ ধরে। কিন্তু অ্যার অনেক ট্যাহা (টাকা) লোন আছে। মাসে অনেকটা কিস্তি চালাই। আরও ২০ হাজার ট্যাহা পাওন (পাওনা) আছে। আজ ৬ জুলাই সকালে ত্যারা আইএরে ট্যাহা দিতে হই।

পেটে খাওন জুটে না কিস্তি কেনে দিওম।’— আবারও লকডাউন বাড়ার খবরে জেঁকে বসা হতাশা আর উৎকণ্ঠা নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন কক্সবাজারের পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাঘোনা এলাকার গৃহিণী ছমুদা বেগম।

চলমান লকডাউনে সাম্প্রতিক হালচাল জানতে চাইলে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রতিবেদক কে ছমুদা জানান, হীড বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন সে। এরপর কিছু টাকা শোধও করেছিলেন। তখন স্বাভাবিক সময়ে কোনরকমে দিন কেটে যাচ্ছিল স্বামীর অভাবের সংসারে থাকা এ পরিবারটির। কিন্তু লকডাউনের শুরুতে থেমে গেছে তার স্বামীর রুজিরোজগার। এরপর থেকে অবস্থা একদমই শোচনীয়। ছমুদা বেগমের মত একই অবস্থা তছলিমা গৃহিনী শাকিলারও।

শুধু ছমুদা বেগম কিংবা শাকিলা নয়। চলমান লকডাউনে কিস্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া অনেক পরিবার। তাদের অভিযোগ, লকডাউনে কিস্তি আদায়ে দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন তারিখ। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিভিন্ন এনজিওর মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনজিও’র এক ফিল্ড অফিসার বলেন, ‘আমরা তো সেভাবে চাপ দিচ্ছি না। যারা দিতে পারছেন তাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে। যারা পারছেন না তাদের জোরজবরদোস্তি করা হচ্ছে না। আর আমরা তো এখানে চাকরি করছি। অফিস যেভাবে বলছে সেটাই করছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পেকুয়া সদর, উজানটিয়া, রাজাখালী, মগনামা, শীলখালী, বারবাকিয়া, টইটং এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নিম্ম ও মধ্যশ্রেণি পেশাজীবিদের মাঝে আর্থিক ঋণ দিয়ে দেয় ব্র্যাক, মুক্তি, আশা, বুরো, হীড বাংলাদেশসহ বিভিন্ন এনজিও। তাছাড়া নামসর্বস্ব কিছু কিছু দাতা সংস্থা লকডাউন পরিস্তিতির মাঝেও কিস্তি আদায়ের নামে চরম গ্রাহক হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঋণগ্রহীতাদের আক্ষেপ—চলমান কঠোর লকডাউনে সৃষ্ট অচলাবস্থায় খেটে খাওয়া ঋণগ্রহীতারা এখন রীতিমত সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এরমধ্যে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তি আদায় করতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

এ বিষয়ে জানতে হীড বাংলাদেশ পেকুয়া শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুমনের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছি না শুধু মাত্র গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করছি। তবে যারা স্বেচ্ছায় দিতে চাই তাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে। বিধিনিষেধ অমান্য করে চাপ দিয়ে কিস্তি আদায় করতেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি আমাকে ওনার সাথে ডিসি রুটে গিয়ে অফিসে দেখা করার জন্য বলেন।

আরো পড়ুন:
শিবচরে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ যুবক আটক
ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবে চুরির সময় হাতেনাতে চোর আটক

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাছেম বিল্যাহ বলেন, ‘লকডাউনে কিস্তি আদায়ের কোনও সুযোগ নেই। সরকারি ভাবে ঘোষণা আছে লকডাউনে কোন ভাবে কিস্তি আদায় করা যাবে না এটা অটো বন্ধ থাকবে। এরকম কোনও এনজিও যদি কিস্তি আদায় করছে অভিযোগ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জুলাই,০৬ি.২০২১ at ২২:২৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমটি/এসআর