সারাদেশে ‘শাটডাউনের’ প্রস্তুতি

৫০টিরও বেশি জেলায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অতি উচ্চ সংক্রমণ

দেশে করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গত বুধবার রাতে অনলাইনে অনুষ্ঠিত কমিটির ৩৮তম সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়, সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করছে।

এদিকে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সক্রিয় বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফারহাদ হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, সারাদেশে শাটডাউনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। আগের চেয়ে বিধিনিষেধ আরো কঠোর হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় বলা হয়, করোনার বিশেষ ডেল্টা প্রজাতির সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে এবং দেশে ইতোমধ্যেই ভাইরাসটির প্রকোপ অনেক বেড়েছে। এই প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ, পঞ্চাশোর্ধ্ব জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। রোগ প্রতিরোধের জন্য খণ্ডখণ্ডভাবে গৃহীত কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা বলছে, কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী, যে সব স্থানে পূর্ণ ‘শাটডাউন’ প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ দেয়ার সুপারিশ করছে। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্যব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।

কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভায় কমিটির সদস্যরা বলেন, এই রোগ থেকে পূর্ণ মুক্তির জন্য ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন। বিদেশ থেকে টিকা সংগ্রহ, লাইসেন্সের মাধ্যমে দেশে টিকা উৎপাদন করা ও নিজস্ব টিকা তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার প্রতি কমিটি পূর্ণ সমর্থন জানায়।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১২ এপ্রিলের পর গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ২০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬ হাজার ৫৮ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর ১২ এপ্রিল ৭ হাজার ২০১ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর জানিয়েছিল অধিদপ্তর। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের।

প্রসঙ্গত, বুধবার ২৮ হাজার ২৫৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ৭২৭ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ৮৫ জনের। শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫৪টি পরীক্ষাগারে ৩০ হাজার ৩৯১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন আরো ৩ হাজার ২৩০ জন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬৮ জনের। মোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিকি শূন্য ৫ শতাংশ এবং মৃতের হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৮১ জনের মধ্যে ৫৫ জন পুরুষ আর ২৬ জন নারী। তাদের মধ্যে ৬২ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৫ জন বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বয়স বিবেচনায় দশোর্ধ্ব ১ জন, বিশোর্ধ্ব ৮ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ৯ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ৯ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৮ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ৩৬ জন। এদের মধ্যে ২৩ জন খুলনা, ২০ জন রাজশাহী, ১৩ জন ঢাকা, ৭ জন চট্টগ্রাম, ৩ জন বরিশাল, ৫ জন সিলেট, ৭ জন রংপুর এবং ৩ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা।

ref: bhorerkagoj