কিশোর অপরাধ এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন গেমস আসক্তি

বর্তমান সময়ে দেশে অন্যতম একটি আলোচিত ইস্যু হল কিশোর গ্যাং সৃষ্টির মাধ্যমে নানা ধরণের অপরাধ সংঘটন। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ নানা ধরণের গেমস এ আসক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী এবং কিশোর ও যুব সমাজ। তাছাড়া, টিকটকসহ ক্ষতিকর অ্যাপসেও বুঁদ হচ্ছে তারা। যে কারণে সমাজে বিশৃংখলা তৈরি হচ্ছে। মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

ইতিমধ্যে অবশ্য প্রশাসনও এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছেন। এর আগে নিকট অতীতের বেশ কিছু ঘটনা (কিশোর অপরাধ) তোলপাড় করেছে সারা জনপদে। প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র উঁচিয়ে হত্যার উৎসবে মেতে উঠছে কিশোর অপরাধীরা। ধরা- ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অনেকে।
কবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে তা বলা মুশকিল। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, অনেক ভালো স্কুলের মেধাবি শিক্ষার্থীরাও এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়েছে। তথাকথিত বড় ভাইরা তাদের নানা অপরাধের অপকৌশল শিখিয়ে দেয় বলে বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে। এসব তথ্য প্রশাসনের হাতে আসার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নানা অনলাইন গেম ও কন্টেন্টে আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগ এবং করোনাকালীন অনলাইন ক্লাসের নাম করে তারা জড়াচ্ছে এসব কাজে। দিনরাত এসব নিয়ে পড়ে থাকায় ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। সেজন্য স্কুল, কলেজ খুলে দিতে চাপ বাড়ছে।

অনলাইনে নানা পর্ণ সাইট ও অশ্লীলতায়ও আসক্ত হচ্ছে কিশোররা। দিনরাত ফেসবুক, ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটির মধ্য দিয়ে সময় ব্যয় করার কারণে পড়ালেখাও লাটে উঠছে। ফলে মাথায় আর সুবুদ্ধি আসে না। জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। এসব বিষয়ে মা,বাবা, অভিভাবককে খোঁজ খবর রাখতে হবে। বিপথে পা বাড়ানো আঁচ করতে পারলেই শুরুতে যেভাবেই হোক তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি শোধরানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কিশোর অপরাধ সহ সব ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। অনেক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়-পশ্রয়ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

আমাদের নেতাদের উচিত হবে না কোন অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়া। তাদের উচিত হবে, কীভাবে শিশু-কিশোরদের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখা যাবে তার জন্য কর্মসূচি তৈরি করা। সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবারের ইতিবাচক ভূমিকা। নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে নিয়মিত খবরা খবর রাখতে হবে অভিভাবকদের। কার কার সাথে তার বন্ধুত্ব করছে, কোথায় কখন কী করছে, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের চেষ্টার কমতি থাকতে পারবে না।ছোটবেলা থেকে শিশুদের সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে, দিতে হবে চরিত্র গঠন উপযোগী নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা। যেসব কারণে কিশোররা অপরাধে জড়াচ্ছে তার মূলে পৌঁছাতে হবে। আমাদের পাঠ্যপুস্তক গুলোতেও শিক্ষামূলক, নৈতিক বিষয়বস্তু সংযোজন করতে হবে। নীতিহীন শিক্ষা থেকে শিশু-কিশোরদের বাঁচাতে এর কোন বিকল্প নেই।

পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে অপরাধীর কঠোর শাস্তির নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। কিশোর অপরাধকে কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। তারাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে আগামীর নেতৃত্ব।

আরো পড়ুন:
চৌগাছায় লকডাউনের প্রথম দিনে প্রশাসনের ব্যাপক কড়াকড়ি

কিশোর অপরাধ এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন গেমস আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে সচেতন হতে হবে বাবা, মাসহ সবাইকে। এর পাশাপাশি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যেসব অ্যাপস এর কারণে শিক্ষার্থীরা অনৈতিকতার দিকে পা বাড়াচ্ছে সেসব বন্ধ করতে হবে। কোনভাবেই যেন এগুলো ব্যবহার করতে না পারে সেধরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই সুফল মিলবে বলে আশা করা যায়।

জুন ,১৮.২০২১ at ১৩:৩৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এম/এসআর