একক মূল্য বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা, ইন্টারনেটের সুবিধা কমতে পারে গ্রাহকের

একক মূল্য বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা, ইন্টারনেটের সুবিধা কমতে পারে গ্রাহকের। প্রান্তিক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম ঠিক করে দেয়া সরকারের ‘এক দেশ এক রেট’ ট্যারিফ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ইন্টারনেট সেবাদাতারা বলছেন, ব্রডব্যান্ড সেবার বড় অংশ খরচ হয় সঞ্চালনে। দূরত্ব ও ব্যান্ডউইথ ভেদে যা একেক রকম। আগে সেটি নির্ধারণ করা না হলে এক রেটে দেশের সব স্থানে ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তাই জুলাই থেকে সেটি কার্যকর নাও হতে পারে।

এর মাসিক প্যাকেজগুলো নিয়েও ভুল বার্তা এসেছে জনগণের কাছে। টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) এক অনুষ্ঠানে গত রবিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার যে মূল্য তালিকা ঘোষণা করেন, তাতে দেখা গেছে- ৫০০ টাকায় গ্রাহক পাবেন ৫ মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) গতির ইন্টারনেট। এছাড়া ৮০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ও ২০ এমবিপিএসের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু প্রতিটি প্যাকেজে উল্লেখ করা এমবিপিএস যে সর্বোচ্চ ৮ জনের মধ্যে ভাগাভাগির সুযোগ রয়েছে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি ওই অনুষ্ঠানে। এর সঙ্গে রয়েছে গ্রাহকের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের খরচ। সুবিধা কমতে পারে গ্রাহকের : ৮ জনের মধ্যে প্যাকেজের গতি ভাগাভাগি করার কারণে গ্রাহকের সুবিধা কমতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইমরান আহমেদ জানান, ব্যক্তি পর্যায়ের বেশির ভাগ গ্রাহকই মাসে ৫০০ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজ পছন্দ করে থাকেন। ঢাকাসহ সেবাঘন এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট সেবাদাতারা সাধারণত ৫০০ টাকায় ১ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দিয়ে থাকেন। এখন নতুন রেটে যদি ৫ এমবিপিএস ৮ জনের মধ্যে ভাগাভাগি হয় তবে গড়ে একজন গ্রাহক পাবেন ৬৪০ কেবিপিএস, যা আগের চেয়ে ৩৮৪ কেবিপিএস কম। তিনি জানান, এর বাইরেও ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় সাইটগুলো সিডিএম থেকে বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন সেবাদাতারা। নতুন প্যাকেজের ফলে তারা চাইলে সেগুলোর জন্যও ভাড়া চাইতে পারবেন। অর্থাৎ তখন গ্রাহককে ৮০০ বা তার চেয়ে বেশি টাকায় আগের মানের সেবা নিতে হবে।

আগে এনটিটিএন খরচ নির্ধারণের দাবি : এক দেশ এক রেট কার্যকরের আগে সঞ্চালন মূল্য নির্ধারণ জরুরি বলে মনে করছেন সেবাদাতারা। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইড এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আমরা একই মূল্যে দেশের সব জায়গায় সেবা দিতে চাই। কিন্তু সেবা পৌঁছানোর খরচ এক না হলে সেটি দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, এখন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংযোগ যায়। এ জন্য ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সঞ্চালন লাইন ভাড়া নিতে হয়। দূরত্ব ও ব্যান্ডইউথের পরিমাণ ভেদে এই ভাড়া একেক রকম। যদি দেখা যায়, কোনো এক জেলায় সংযোগ দিতে গিয়ে সঞ্চালন ভাড়া বেশি হয়, তবে ওই মূল্য তালিকা বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব- পাল্টা এমন প্রশ্ন করেন তিনি।

এনটিটিএনের ভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ নেই : দেশে বর্তমান ৪টি এনটিটিএন কোম্পানি থাকলেও মূলত ফাইবার এ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশনসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাজার। দেশজুড়ে এই কোম্পানি দুটির নেটওয়ার্কের ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের অভিযোগ রয়েছে অনেক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইএসপি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলেন, বাজারে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা না থাকায় ওই কোম্পনিগুলো নিজেদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করে। যেমন, যদি কোনো আইএসপি গাইবান্ধায় সংযোগ দিতে যান, তার গ্রাহক কম হলে প্রতি এমবিপিএসের দাম তারা ৩৫০ বা ৪০০ টাকা চাইবে। আবার কারো কাছ থেকে একই এলাকায় সঞ্চালন ভাড়া নেবে ১৫০ টাকা। অন্যদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) সেবামান ভালো না হওয়ায় মূল্য নির্ধারিত থাকলেও সেটি নিতে আইএসপিরা আগ্রহী হয় না। আর কয়েক বছর আগে অনুমোদন পাওয়া আরেক কোম্পানি বাহনকে তো এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে কাজ করার সুযোগই দেয়া হয়নি।

আরো পড়ুন:
পঞ্চগড়ে বজ্রপাতে এক নারীর মৃত্যু
ঝিনাইদহে হঠাৎ বৃষ্টিতে ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেট মারা যাচ্ছে গরু

বড় কোম্পানির দখলে যাবে বাজার : সঞ্চালন লাইনের খরচ বেশি হলে অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে সংযোগ দিতে আগ্রহী হবে না ইন্টারনেট সেবাদাতারা। এতে একদিকে ইন্টারনেটের বিকাশ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বড় কোম্পানিগুলোর দখলে বাজার চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন এইটিএইটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের আহমেদ বলেন, অনেক বড় কোম্পানি কিছুদিন লোকসান দিয়ে হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখবে, যেন ছোট কোম্পানিগুলো বাজার থেকে ঝড়ে যায়। এক পর্যায়ে অনেক গ্রাহক হলে তারা লাভের মুখ দেখবে। তবে এতে ব্রডব্যান্ড সেবার পরিধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারকে উচিত সব কোম্পানির জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা। এ জন্য আগেই যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া আগে জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।