যশোরের শার্শায় অনলাইন ক্যাসিনোতে আসক্ত তরুণরা

যশোরের র্শার্শায় অনলাইন ক্যাসিনোতে আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব ও তরুণ সমাজ। বাদ পড়েনি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি জেনেও স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ।

রাজধানী ঢাকার ক্যাসিনোর অনেকেই কারাগারে রয়েছে। কিন্তু তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় প্রকাশ্যে জুয়া-হাউজি কমে গেছে। অথচ ডিজিটাল পদ্ধতির অপব্যবহার করে অ্যানড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে জমজমাট হয়ে উঠেছে জুয়ার আসর। এটাকে নাম দেয়া হয়েছে- অনলাইন জুয়ার আসর। বিভিন্ন অ্যাপ খুলে চালানো হচ্ছে অনলাইন জুয়া। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায়।

এতে দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্র, বেকার যুবক ও তরুণ শিক্ষার্থীরা এসব খেলায় জড়িয়ে বখে যাচ্ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতূহল বশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অনলাইন জুয়া সব থেকে বেশি খেলে থাকেন শিক্ষার্থীরা। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী খেলার চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড। এখন সেটাও সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ে অনলাইন জুয়ার দিকে। এক সময় তারা এ খেলায় আসক্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

সূত্রে জানা যায়, শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে ঢুকে পড়েছে প্যাথলজিক্যাল জুয়া নামের অনলাইন ক্যাসিনো। এ খেলায় একজন আসক্ত হলে আরো ১২ জনকে অংশগ্রহণ করাতে পারলে তার ‘এক হাত’ হয়।

এভাবে এখন শার্শার আনাচে-কানাচে কয়েক হাজার অনলাইন ক্যাসিনোতে পথভ্রষ্ট হচ্ছেন। এটির বিস্তার এখানে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এখানের যুব সমাজ, তরুণ সমাজ অন্যান্য নেশা ছেড়ে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটে জুয়ার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের টাকা হারাচ্ছেন। অনলাইন ক্যাসিনো খেলে গুটিকয়েক মানুষ অল্প সময়ে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হলেও অধিকাংশ হয়েছেন সর্বশান্ত।

অনলাইন ক্যাসিনোতে আসক্তি হলে সাইকোপ্যাথোলজির একটি রূপ উৎসাহিত হয়। যার অভিজ্ঞতা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গেমসে অংশ নেয়া এবং আর্থিক ইউনিট বা অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে মুদ্রার সঙ্গে বাজি ধরা। যারা এ খেলায় বার বার হারবে একসময় তাদের আর বাজি লাগানোর মত টাকা থাকে না। তখন বাধ্য হয়ে তারা করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধজনিত কাজ। সকল বিষয়ে চিন্তা করে এখনই ব্যবস্থা না নিলে উপজেলাব্যাপী আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন উপজেলা অনেক মানুষ।

সূত্র জানায়, যেসব অনলাইনে ক্যাসিনো জুয়া চলছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ডে৩০ডটনেট’, ‘গেমটি১০ডটকম’, ‘টাকা১০০ডটকম’ নামে অনলাইমে প্রবেশ করতে হয়। এরপর ক্লাবে ঢুকে খেলা শুরু করতে হয়। আর এসব ক্লাবের মধ্যে রয়েছে, যশোর ক্লাব, সিটি ক্লাব, বেটগুরু ক্লাব,খুলনা ক্লাব, বিডি২৪ ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, ঈগল ক্লাব, অনলাইন স্পোর্টস ক্লাব ইত্যাদি।

সূত্র জানায়, অনলাইনভিত্তিক লুডু, ক্যারাম, তরুণদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হালের পাবজি গেইম, ফ্রি-ফায়ারসহ শতাধিক গেমে আসক্ত হচ্ছেন কিশোর-কিশোরীরা। আর এসব খেলায় বেশিরভাগ সাইট পরিচালনা করা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। চাহিদা বাড়ায় প্রতিদিনই গজিয়ে উঠছে নতুন সাইট। গেমভিত্তিক মোবাইল অ্যাপসও আছে বলে জানা গেছে। তাই কিশোর-কিশোরীরাও এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্মে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে।

আরো পড়ুন:
কেশবপুরে পণ্যবাহী পিকআপ ও আনুসাঙ্গিক দ্রব্য বিতরণ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা জানান, অনলাইন ক্যাসিনো যে জুয়া খেলা এটা আমরা জানতাম না। এখন অনেক টাকা লোকসান করে যতটুকু সামনে এগিয়ে গেছি পিছনে যাওয়া তো কঠিন।

স্থানীয় প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা শুনেছি। আমরা আইটি সেকশনে যোগাযোগ করেছি। যত দ্রুত সম্ভব অনলাইন ক্যাসিনোর নামে জুয়া খেলা বন্ধ হয়ে যাবে।