” যদি আবার দেখা হয় ”
– আসিফ ইকবাল আরিফ
যদি আবার দেখা হয়
এই ছায়া ঢাকা সবুজ প্রান্তরে।
জৈষ্ঠ্যের দাবদহকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
ঘুঘুর ঠোঁটের মতো জমে থাকা প্রেম তৃষ্ণা নিয়ে
তোমার সাথে দিনান্তে হারাবো পথের পর পথ।
যদি আবার দেখা হয় নির্জন এই প্রান্তে।
খালের ধারের সব ভাটফুলে সাজাবো তোমার মুখয়ব।
বাবলার চিরল চিরল পাতাতে সাজাবো তোমার ভ্রযুগল।
তেলাকুচোর লাল পাকা ফলে রাঙাবো তোমার বারুদের ওষ্ঠ।
ঢোলকলমির বেগুনীতে সাজাবো তোমার গ্রীবার তল।
তারপর দূর বহুদূরের প্রান্তের সব থেকে উঁচু জমির আইলের
সবুজ দুর্বাঘাসে হবে তোমার আর আমার বসার মাদুর।
যদি আবার দেখা হয় হিজলের বনে, জারুলের তলে
নাগকেশরের গানে, অলকানন্দার হলুদে, সবুজ কলাপাতার সকালে।
চৈত্রের জল তেষ্টাতে মরা – মাছের ঠোঁটের আর্তনাদ নিয়ে বলবো,
বলবো, তোমাকে ভালোবাসি এই প্রান্তের মতো – যার শেষ আছে
তবুও থেমে থাকা নেই, যা আদিম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো রয়েছে বেঁচে।
তোমাকে ভালোবাসি ঐ গোধুলির মতো – যা মুহূর্তেই থেমে যায়
আবার ফিরে ফিরে আসে প্রান্তিক জনের টিকে থাকার সাক্ষী হয়ে।
তোমাকে ভালোবাসি ঐ সন্ধ্যের মতো করে – যা নিস্তব্ধতার গান বয়ে আনে
ঐ শালিক ফিঙে বুলবুলি আর দিনের ক্লান্তিতে ঘরে ফেরা কৃষাণের কোলজুড়ে।
তোমাকে ভালোবাসি এই রাতের মতো – যার হৃদয়ে শত বেদনার রক্ত গোলাপ!
তবুও একটি নতুন সূর্যের অপেক্ষায় নিজেকে আঁধারে লুকিয়ে রাখে।
যদি আবার দেখা হয় এই শতবর্ষী বটের তলে।
ভোর সকালের তাজা বায়ান্নোটি বকুল ফুল কুড়িয়ে –
মালা গেঁথে পরাবো তোমার প্রেম গলে,
ষেষট্টিটি নয়নতারা ফুলে সাজাবো তোমার শাড়ীর আঁচল,
ঊনসত্তরটি ধবধবে সাদা টগর গুজে দিবো তোমার চুলের খোপাতে,
আর ঠিক একাত্তরটি রক্ত গোলাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে
মুহূর্তের প্রান্ত কাঁপিয়ে গমগম শব্দের উল্লাসে বলবো
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আর যদি না ফেরা হয় এই প্রান্তে!
সেফালীর ছায়াতলে, ডাহুকের গানে
ছাতিমের মরণ গন্ধে, কদমফুলের নরম তুলতুলেতে,
বালি ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা কাশফুলের সবুজ ডাটাতে,
রক্তজবার নিবিড় লালে, কেয়াপাতার চওড়াতে,
পাতাবাহারের রঙে, শিউলিফুলের গন্ধে,
জৈষ্ঠ্যের আম কাঠালের মিষ্টিতে
বর্ষার নদী ভরা জলে, আর ঢেউয়ে দোলা তালে
তাহলে দূর নক্ষত্রের বুকে আমাকে খুঁজে নিও।
আমি হয়তো নক্ষত্রের মতোই মরে গিয়েছি।
খসে পড়ে প্রেম পাঠিয়েছি রাতের মতো করে
মায়া জড়িয়ে সবুজ ঘাসের ডগাতে, টিয়ার লাল ঠোঁটে
আহত আর্তনাদে কেঁদে মরা ঘুঘুর গানে।
আর তারপরেও যদি আমাকে না পাও –
শালিকের গান শুনো চোখ বুঝে।
আমি শালিকের গান ভালোবাসতাম খুব করে।
যদি শালিকের গানেও আমাকে না পাও –
প্রান্তের সব জায়গা খুঁড়ে খসে পড়া বকের পালক খুঁজে নিও।
হয়তো আমি সেখানেই আছি।
আমার কিশোরকাল, আর অবহেলার সব সকাল-বিকাল
আমার বেড়ে ওঠা ঐ শালিকের সাথে, ঐ বকেদের সাথে।
—————-000—————-
লেখক : সহকারী অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।