রাতের বৃষ্টিতে ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি পানিতে ভাসছি: জলাবদ্ধতায় বিপাকে দেড় হাজার মানুষ

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪৭ নং ওয়ার্ড শিলমুন ব্যাপারী পাড়া, মাষ্টার পাড়া ও মোল্লার গ্যারেজ এলাকার প্রায় দেড় হাজারের অধীক পরিবার। স্বল্প বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাসনের ব্যাবস্থা না থাকায় বসত বাড়ীতে হাটু থেকে কোমড় পর্যন্ত উচ্চতায় পানি জমা হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার আসবাপত্র। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে প্রায় অসহায়ের মতোই বিপাকে জীবন যাপন করছে পানি বন্দি সকল পরিবার। ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকায় আটকে পড়া পানির মাধ্যমে বাসা বাড়ীতে মল,মুত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ সকল বয়সের শ্রমজীবী মানুষ। চলাচলের রাস্তায় হাটু থেকে কোমড় পানি হওয়ায় বাজার, ঘাট ও মসজিদ, মাদ্রাসায় যেতে পারছেনা শ্রমজীবী মানুষ।

সরজমিনে এই এলাকার বিভিন্ন বসত বাড়ীতে গেলে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি জমাট বাধায় বেশির ভাগ বাড়ীতে কোমড় পরিমান পানি জমেছে। বিছানা, ফ্রীজ, আলমারিসহ ঘরের সকল আসবাপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের বেচে থাকার শেষ সম্বল টুকু পানিতে ভীজে নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল হিসেবে টঙ্গীতে এসে চাকুরী করে জীবন যাপন ও গ্রামের বাড়ীতে রেখে আসা প্রিয় মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে, দু মুঠো আহার জোগাতে নিরলস পরিশ্রম করছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভাড়ায় বসবাস করা শ্রমজীবী মানুষ গুলোর তিল তিল করে জমানো টাকায় কেনা আসবাপত্র।

জানা যায়, পানি নিষ্কাসনের জন্য শিলমুন এলাকার স্থানীয় জনগনের পক্ষে ১। কাজী মোঃ নুরুল আমিন, ২। মোঃ রফিক উল্লা পাটোয়ারী ও ৩। মোঃ নুরুল ইসলাম গত ২৭শে মে ২০১৮ ইং তারিখে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সওজ) ঢাকা সড়ক সার্কেল এলেন বাড়ী, তেজগাঁও, ঢাকা বরাবর ‘’ টঙ্গী-কালীগঞ্জ- ঘোড়াশাল সড়কের ৩য় কিঃমিঃ অংশে শিলমুন বাজার সংলগ্ন স্থানে সড়কের ডান পাশের পানি নিষ্কাশন এর জন্য বক্স কালভাট/ পাইপ কালভাট নির্মাণের জন্য আবেদন’’ মর্মে আবেদন করলে সওজ পাইপ কাল্ভাট স্থাপন করলেও কালভাট এর মুখ ভরাট করে আকিজ বেকারস নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পর থেকে পুনরায় ড্রেনেজ ব্যাবস্থা বিকল হয়ে গেছে। বর্তমানে পাইপ কালভাটে ড্রেন প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকায় তার তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যাপারী বাড়ী রোডের স্থানীয় বাড়ীওয়ালা মিজানুর রহমান জানান, রাতে বুঝতে পেরেছিলাম বৃষ্টি হছে কিন্তু সকালে ঘুম ভেঙেছে শরীর ভেজা অবস্থায়। দ্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকায় এলাকায় প্রতিবারের বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমার ঘরের ফ্রিজ, খাট, আলমারি, বাচ্চার পড়ার টেবিলসহ ভাড়াটিয়াদের সকল আসবাপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। চার বছর যাবত এমনি ভাবে দিন কাটাচ্ছি। স্থানীয় কাউন্সিলর সাদেক আলীকে বিকল্প ব্যাবস্থা করার জন্য বহুবার আমি ও আশপাশের সবাই জানালেও পানি যে জায়গা দিয়ে নিষ্কাশন হতো সেই জায়গা ভরাট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় তিনি কিছু করতে পারে নাই। মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করে বলবো দয়া করে আমাদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্ত করেন। আমরা বাচতে চাই। জলাবদ্ধতায় আমরা খাবার জন্য পানিটাও গ্রহন করতে পারছি না। নর্দমার পানিতে আমরা ক্লান্ত।

শিলমুন ব্যাপারী বাড়ী রোডের বাসিন্দা কাজী মোঃ নুরুল আমিন বলেন, গত চার বছর যাবত সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা ঘাট ও বাড়ী ঘরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি চচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এতো দিন পেরিয়ে গেলেও আমাদের ভোগান্তি যেন দিন দিন আরোও বেড়ে যাচ্ছে। আমি মেয়র সাহেবকে অনুরোধ করবো উনি যেন আমাদের এলাকায় এসে দেখে যান আমরা কেমন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। উনি এলাকা পরিদরশন করে যদি মনে করেন আমরা উনার পরিছন্ন নগরীতে সুখে আছি তবে আমাদের চাইবার আর কিছুই থাকবেনা। মনের কষ্ট লুকিয়ে রাখতে ভেবে নিবো বাংলাদেশে ঋতু একটাই সেইটা হলো বর্ষাকাল।

এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর সাদেক আলী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে এই জায়গা গুলো খুবই নিচু হওয়ায় এই স্থানের পানি কোন ড্রেনের সাথে সংযোগ করলেও বের হচ্ছে না। পানি নামার একমাত্র কালভাটের মুখ ভরাট করে প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় পানি নামা বন্ধ রয়েছে। আমরা কালভাটের মুখ খোলা ও বিকল্প ব্যাবস্থা তৈরির প্লান করতেছি। বাড়ী উচু করে নির্মাণ করলে এই সমস্যা কিছুটা নিরসন হবে বলে আমি মনে করছি।