জেলা হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করছে নরসিংদী সিভিল সার্জন এর অবসর প্রাপ্ত পিএ বুলবুল !

নরসিংদী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সম্প্রতি অবসরে গেলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী সিভিল সার্জনেরর পিএ কালাম সারোয়ার বুলবুল। যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারী বুলবুল পিএ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় জেলাব্যাপী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তার ভয়ে ছিলো তটস্ত। চাকুরী জীবনে কোন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে সকলেই বুলবুলকে সমীহ করতে বাধ্য হতো।

নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল বর্তমান কোভিড হাসপাতাল এর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন সে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক। তত্বাবধায়ক না থাকা অবস্থায় জেলা সিভিল সার্জনের পিএ ওই দায়িত্ব পালন পালন করেছেন। প্রায় দেড় যুগ যাবত জেলা হাসপাতালে তত্বাবধায়ক না থাকার সুযোগে পিএ হিসেবে হাসপাতালটির কর্তৃত্ব করেছেন বুলবুল। কয়েক মাস পূর্বে জেলা হাসপাতালে তত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেছেন ডা. শীতল চৌধুরী। পি আর এল এ যাওয়ার পর থেকে বুলবুল হাসপাতালটির তত্বাবধায়ককে নানা অজুহাতে দুর্বল করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের উপর খবরদারী করে চলেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কালাম সারোয়ার বুলবুল অবসরে যাওয়ার পর স্বাচিপ নেতাদের মাধ্যমে ২মাস বিনা বেতনে সিভিল সার্জন অফিসে চাকুরী করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন সিভিল সার্জনকে। স্থানীয় সাংবাদকর্মীগণ এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, পিআরএলে যাওয়ার পর অফিসে কাজ করার বিধান নেই। তিনি তাকে অফিসে আসতে বারণ করেন। অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সোচ্চার থাকায় এ কাজে সফল হতে পারেনি বুলবুল।

 

সিভিল সার্জন অফিসে সুবিধা করতে না পেরে অবসরে গিয়ে জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়কের ঘাড়ে চেপে বসেন বুলবুল। প্রতিদিন ৪/৫ ঘন্টা জেলা হাসপাতালের মহিলা প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক এর কক্ষে বসে অফিসিয়াল কাজকর্মের পাশাপাশি হাসপাতালে তত্বাবধান করে থাকেন। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দেখবাল করে থাকেন। প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক অফিসের কাজকর্ম ঠিকঠাকভাবে করতে পারেন না এমন অজুহাতে তাকে সহযোগীতা করতেই বুলবুল নিয়মিত এখানে বসেন। সিভিল সার্জন অফিসে চাকুরীরত থাককালীন নিয়মিত দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত জেলা হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের কক্ষে বসে তিনি সময় কাটাতেন এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিক নির্দেশনা দিতেন। এসময় তিনি জেলা হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স, অফিস স্টাফ ও ঠিকাদারদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন।

অবসরে যাওয়ার পর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্বস্তি পেলেও জেলা হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক রয়েই গেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ নথি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোপনীয় নথি নিয়ে নাড়াচাড়া করে থাকে বুলবুল। এতে যে কোন সময় তাদের ক্ষতি হতে পারে এ ভয়ে থাকেন চাকুরীরতগণ।

অভিযোগ রয়েছে সিভিল সার্জন অফিসে চাকুরীরত অবস্থায় বুলবুল নরসিংদী জেলাব্যাপী শতাধিক প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করার নামে মালিকদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এ সময় বুলবুল জেলা হাসপাতাল সংলগ্ন লাইসেন্সবিহীন ভিক্টরী ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও নরসিংদী ষ্টেশন রোডে নূরজাহান প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে তুলেন। জেলা হাসপাতালে বসে সেখান থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে তার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নারী কেলেঙ্কারীর একাধিক অভিযোগ। রাজধানী ঢাকাসহ নরসিংদী জেলা সদরে রয়েছে তার একাধিক বাড়ী, গাড়ী সহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। এসব বিষয়ে ইতোপূর্বে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের মাসোয়ারা আদায় করে যাচ্ছে বুলবুল। তার দাবীকৃত মোটা অংকের মাসোয়ারা দিতে অস্বীকার করলে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে নামে বে-নামে অভিযোগ করে থাকেন।

সম্প্রতি নারীগঠিত গুঞ্জন আরো জোরালো হয়েছে। নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও তার আশে পাশের এলাকায় এ গুঞ্জন অব্যাহত রয়েছে। এলাকার লোকজন জেলা হাসপাতালে বুলবুলের আসার বিষটিতে দৃষ্টি রাখছে। রয়েছে নানা মুখরোচক আলোচনা। সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদকর্মীগণ জেলা হাসপাতালের মহিলা হিসাব রক্ষক এর কক্ষে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে সেখানে গেলে সাংবাদিকদের দেখে বুলবুল হন্তদন্ত হয়ে সে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে মোটর সাইকেলযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালে বুলবুলকে নিয়ে নারীগঠিত গুঞ্জন ও হাসপাতালে নিয়মিত বসে অফিসের কার্যক্রম করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, নিয়মিতই বুলবুলকে জেলা হাসপাতালে আসতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে তত্বাবধায়ক স্যার ভালো বলতে পারবেন। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শীতল চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মহিলাটি এত দক্ষ নয়। একটা চিঠি লিখতে দিলে সে বুলবুলকে ডেকে নিয়ে আসে এবং তার মাধ্যমে করিয়ে নেয়। নারীগঠিত বিষয়ে নানা গুঞ্জন আমার কানে এসেছে ।