করোনা রোগীর সংস্পর্শ ও ভ্রান্ত ধারণা

কোভিড আক্রান্ত রোগীর আশপাশে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বিভ্রান্ত ধারণা রয়েছে কোভিডমুক্ত মানুষের কাছে যাওয়া নিয়েও।

করোনায় আক্রান্ত হয়েছে শুনে অধিকাংশ স্বজন সেই রোগীকে জেনেবুঝে এড়িয়ে চলেন। তাদের ডেকেও পাওয়া যায় না। তারা মনে করেন কাছে গেলেই করোনা হবে! এ কারণে যত ভয়!

প্রশ্ন হচ্ছে, এ পর্যন্ত যত মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কতজন আক্রান্তদের কাছে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন? তারপরও অযথা ভীতির সৃষ্টি করা। দু’জন একসাথে একজন করোনা রোগীকে দেখতে যান। কয়েক মিনিট ছিলেন। এরপর একজনের জ্বর ঠাণ্ডা লাগে। সাথে যিনি ছিলেন তিনিতো রীতিমতো রোগী দেখতে যাওয়াকে দোষারোপ করে ফেললেন! প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি দোষারোপ করলেন তারতো কিছুই হয়নি। আবার যার জ্বর ঠাণ্ডা লাগে পরে তা ঠিক হয়ে যায়। তাহলে করোনা রোগী নিয়ে ভয়ের কারণ কী? এটি পুরোপুরি মানসিক সমস্যা।

রোগী হিসেবে আমার বাস্তব উপলব্ধি হচ্ছে, বর্তমানে করোনা রোগীর সংস্পর্শে গেলে তেমন কেউ আক্রান্ত হচ্ছে না। খুলনার ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটে তাই দেখেছি। আমি যে ওয়ার্ডে ছিলাম সেখানে সব রোগী মিলে কমপক্ষে ৩০ জন স্বজন তাদের সেবায় ছিলেন। প্রত্যেকের প্রতিদিন অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী দেখতে আসতেন। যারা এক বেডে থেকে দিনের পর দিন রোগীর সেবা করেছিলেন হাসপাতাল ছাড়ার আগে তাদেরকে কোভিড টেস্ট করা লেগেছিল। আল্লাহর রহমতে প্রত্যেকের নেগেটিভ আসে। আমার সাথে তিনজন সার্বক্ষণিক ছিল। মহান মালিকের বিশেষ অনুগ্রহে তাদেরও নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। আলহামদুলিল্লাহ। বাড়িতে আসার পরও সকলে সুস্থ আছে।

বাস্তব উপলব্ধি হচ্ছে, যারা রোগীর কাছে থাকবেন এবং দেখতে যাবেন তাদের অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ডাবল মাস্ক ব্যবহার করলে নিরাপত্তা কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে। নিজের সেফটির জন্য মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। সাথে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

তাহলে আমরা করোনা আক্রান্ত স্বজনদের অহেতুক এড়িয়ে যাচ্ছি কেন? ডাক্তাররা বলছেন, কোভিড আক্রান্তদের মনোবল বাড়াতে হবে। তা না হলে ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকবে। ফলে, প্রত্যেক রোগীর স্বজনদের উচিত তাদের কাছে এগিয়ে আসা। রোগীকে মনোবল বাড়ানো। মনে রাখবেন, করোনা কোত্থেকে কার কীভাবে হবে সেটি সবারই অজানা। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি মানুষ কমবেশি সজাগ থাকার চেষ্টা করছেন। তারপরও আক্রান্ত হচ্ছেন। শেষ কথা হচ্ছে, আমরা কাউকে এড়িয়ে না গিয়ে মানবিক হই। আপনার সামান্য মানবিকতা একজন মরণাপন্ন মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে। যদি এমনটি হয় তাহলে সেটিও কম কিসে!

লেখক : এম.আইউব
চিফ রিপোর্টার, দৈনিক গ্রামের কাগজ, যশোর।
সভাপতি, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর।