থানচিতে পানির সংকট বাঁচাতে হলে প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচাতে হবে: মোঃ আবদুস সালাম

বান্দরবানে থানচিতে গহীন অরণ্যে বিভিন্ন এলাকায় থানচি সড়কসহ ঝিড়ি-ঝর্ণা, ছড়াগুলোতে পাথর উত্তোলন চলছে। তা প্রতিরোধে বলিপাড়া ইউনিয়নের ডাকছৈ পাড়া মাংগই ঝিড়িতে অভিযানকালে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান জেলা পরিদর্শক (জুনিয়র ক্যামিস্ট) মোঃ আবদুস সালাম বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ এভাবে নষ্ট করতে দেয়া হবে না, পানির সংকট বাঁচাতে হলে আগে প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচাতে হবে। পাথর উত্তোলনকারী চোরদের সাথে কোন আপোষ নয়। তারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী, পাথর উত্তোলনকারীদের বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাহাড়ে গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত সচেতন সমাজে ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজে পাথর উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে সমন্বয়ের সোচ্চার হোন। পাথর খেকোদের ধরা দিতে পাথর উত্তোলননের খবর পেলে আমাদের জানাবেন। এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান অফিস সব সময় পাশে আছি, থাকব গত বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) এসব কথা বলেন তিনি।

বান্দরবানে থানচি উপজেলাতে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝর্ণা-ঝিড়ি-ছড়া গুলোতে পাথর উত্তোলণের কারনে পানির শুকিয়ে গেছে। পাওয়া যাচ্ছে না খাবার পানি। বাধ্য হয়ে কয়েক কিলোমিটার দুর থেকে কাঁধে ও মাথায় করে নিয়ে আসতে হচ্ছে খাবার কিংবা ব্যবহারের যোগ্য বিশুদ্ধ পানি।

এদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর্পূন এক একটা ইউনিয়ন এলাকায় দর্শণীয় স্থান রেমাক্রি মুখ, ঙাঁফাখুম, ঙাক্ষ্যং খাল, আমিয়াখুম, বেলাখুম, সাতভাইখুমসহ আশে পাশে ঝিড়িগুলো হতে পাথর উত্তোলণ চলমান রয়েছে। সদর ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড এলাকা কাইতং পাড়া, বোডিং পাড়া, কংহ্লা পাড়া, চমি পাড়া, লাকপাইক্ষ্যং পাড়া, হাব্রু হেডম্যান পাড়া আশে পাশে এলাকার ঝিড়ি গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পাথর উত্তোলণের কারনে এই সমস্ত পাড়ার উপরে বিরোধ প্রভাব পড়েছে।

আইলমারা ঝিড়ি, বালু ঝিড়ি, মাংগই ঝিড়ি, শিলা ঝিড়ি ও নাইক্ষ্যং ঝিড়ির, মগংগ্রী ঝিড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝিড়ি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের কারনে ইতোমধ্যে পানি অভাবে পার্শ্ববর্তী অনিল পাড়া, কমলা বাগান মারমা পাড়া, কমলা বাগান ত্রিপুরা পাড়া, কমলা বাগান চাকমা পাড়া, ডাকছৈ পাড়া, কমান্ডার সাখয় পাড়া, মেরোওয়া পাড়া ও হৈয়তং খুমি পাড়াসহ আশেপাশে গ্রামগুলোতে জনসাধারণের মাঝে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। পাথর খেকোদের হাত থেকে রেহাই পাইনি চয়ক্ষ্যং ঝিড়ি, সালোকক্যা ঝিড়ি, থাংদয় ঝিড়ি, পদ্ম ঝিড়িসহ শতাধিক ঝিড়িগুলো।

প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ পানি উৎস্যের একমাত্র উপাদান ঝিড়ি পাথর আর নেই। পাহাড়ে জীব বৈচিত্র হারাতে বসেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর হুমকিতে পড়েছে থানচি। এভাবে চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যৎতে পাহাড় হবে মরুভূমি।

কিছু সংখ্যক পার্শ্ববর্তী লামা, চকরিয়া, সাতকানিয়া, আমিরাবাদ ও দোহাজারি এলাকার অসাধু ব্যবসায়ীসহ উপজেলার স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে কোন প্রকার বাধা ছাড়াই ঝিড়ি-ঝর্ণা-ছড়াগুলো থেকে পাথর উত্তোলন করে দিবাত্রি পাচার করেই চলেছে। স্থানীয়রা পাথর উত্তোলণের বাধা দিলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্রের হুমকিতে পাথর উত্তোলণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। বছরে সিজনের অক্টোবর মাস হতে শুরু করে জুন মাস পর্যন্ত চলে পাথর উত্তোলন।

অন্যদিকে পাহাড়ে উপর আম, কাজুবাদাম, লিচু, কলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগানে কৃষকরা পানির অভাবে বাগানে প্রয়োজনীয় স্প্রে করতে পারছেন না। যার দরুন এলাকার মানুষের আয় উপার্জনও দিন দিন কমে এসেছে। পাহাড়ে খেতে খাওয়ার কৃষক শ্রেনি সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা উপর চরম দুর্বিসহ হয়ে উঠছে।

উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার ঝিড়ি-ঝর্ণা গুলোতে পাথর উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, ছোট মাছ, ছোট চিংড়ি ও কাকড়াগুলো হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাহাড়ে ঝর্ণা-ঝিড়ি-ছড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও সম্পদ হারিয়ে হাহাকার। প্রায় ঝর্ণা-ঝিড়ি-ছড়া গুলো ইতোমধ্যে শুকিয়ে তিব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার খেতে খাওয়ার কৃষক শ্রেনির সাধারণ মানুষ।

এলাকার সচেতন সমাজ মনে করেন, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার অভিযান পরিচালনা করে জড়িমানা করে বসে থাকলে পাথর উত্তোলন করার বন্ধ হবে না। প্রকৃতিকে বাঁচাতে পর্যটন এলাকা হিসাবে এই উপজেলাকে স্থায়ী ভাবে পাথর উত্তোলণ বন্ধ করার দরকার। তাই প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্বনয়ের প্রকৃতিকে বাঁচাতে স্থায়ীভাবে পাথর উত্তোলণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহনের সচেতন সমাজ নাগরিকগণের একমাত্র দাবি।

এপ্রিল ৩০, ২০২১ at ১৯:২১:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/চিএএম/এমআরএইস