পাইকগাছায় প্রচন্ড গরমে অস্থির জনজীবন: সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট

সুন্দরবন উপকুলীয় অঞ্চল খুলনার পাইকগাছা উপজেলাবাসী সিডর ও আইলার পর সর্বশেষ আম্ফানের ক্ষতি এখনও ঠিকমত পুসিয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থানের কারনে প্রায় প্রত্যেক বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মূখীন হতে হয় এ জনপদের মানুষদের। বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর সদ্য লবনাক্ততার রেশ কাটিয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়বে তার যেন উপায় নেই। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেন পিছু ছাড়ছেনা।

প্রতিবেদনকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা চিত্র প্রায় একই দেখাযায়। প্রচ- তাপদাহে পুড়ছে জনজীবন ও প্রাণীকুল। বৈশাখের এই গরমে রোজাদারদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ঘরে বৈদ্যুতিক ফ্যানের বাতাসেও ছড়াচ্ছে গরমের হাওয়া। বিশেষ করে দুপুরে রোদে ঘরের বাইরে চলাচলকারীদের শরীর ও মুখমন্ডল যেন পুড়ে যাচ্ছে। দুপুরের পর যেন ঘরের বাইরে তাকানোই যাচ্ছে না। কোথাও এতটুকু স্বস্তি নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে তাপ মাত্রা একের পর এক বেড়েই চলেছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানান, এ ধরনের তীব্র তাবদাহ আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। আপাতত এ জেলায় আগামী ২/৩ দিন বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এদিকে প্রচন্ড গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। একটু বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে রোজাদার মানুষ। কবে হবে একটু বৃষ্টি, কমবে তাপমাত্রা।

অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড গরমে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডায়রিয়া ও গরমজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট । যারফলে পৌর সদরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে সুপেয় পানির অভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে খাওয়ার অযোগ্য বিভিন্ন পুকুর ও খালের দুর্গন্ধযুক্ত পানি এমনটাই দাবি স্থানীয় অনেকের। যা বিভিন্ন লোক ভ্যানযোগে পুকুর ও খালথেকে তুলে এনে সরবরাহ করছেন এসকল হোটেল-রেস্তোরায়। অন্যদিকে উপজেলার প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় পানির জন্য শুরু হয়েছে হাহাকার।

তাছাড়া দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়াতে প্রচন্ড তাপদাহে শুকিয়ে গেছে খাল বিল। তারউপর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপগুলোর অধিকাংশই বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়েছে। সচল গুলোর পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিকযুক্ত। যার কারণে খাবার পানি সংগ্রহে বিপাকে পড়তে হচ্ছে গৃহবধূদের। কাঠফাটা রোদে ফসলের মাঠ, খাল, বিল ও প্রান্তর ফেটে চৌচির। দিনভর সূর্যেরতাপে নুইয়ে পড়ছে গাছের পাতাও। নেতিয়ে পড়েছে সবজি। এছাড়া পানির অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আম, জাম, লিচু সহ বিভিন্ন প্রকার ফল। চরম বিপাকে পড়েছেন তরমুজ, মিষ্টিআলু, চীনাবাদাম সহ সব্জি চাষিরা। এমনকি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বৃষ্টির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করছেন নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনলয়ে।

সর্বশেষ নিরাপদ পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহে উপজেলা পরিষদের পুকুর, দীঘি ও নিরাপদ জলাশয় সংস্কারসহ নতুন পুকুর খনন ও গভীর নলকূপ স্থাপন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চত করতে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এপ্রিল ২৮, ২০২১ at ১৫:৫১:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডিএইস/এমআরএইস