বীর মুক্তিযোদ্ধা অহেদ আলী এখন ভিক্ষুক

যশোরের চৌগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা অহেদ আলী (৯৩) এখন ভিক্ষুক। ৩ বছর ধরে তার ভাতা বন্ধ, ঘরে অসুস্থ্য স্ত্রী তার ওষুধ আর নিজের বেঁচে থাকার তাগিদেই এখন তিনি ভিক্ষার ঝুঁলি ঘাড়ে নিয়েছেন। চৌগাছার মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতরে বিরোধের কারনেই তার এই পরিনতি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অহেদ আলী চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়নের হয়াতপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৮ নং সেক্টেরে যুদ্ধ করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা চালু করলে তিনি সেই ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু ৩ বছর যাবত এই মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ। কোন আয় রোজগার না থাকায় ৯৩ বছর বয়সে তিনি এখন ভিক্ষা করেই সংসার চালান।

শনিবার সকালে চৌগাছা বাজারে ভিক্ষা করার সময় কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা অহেদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস বর্তমান ঝিনাইদহ জেলাসহ যশোরের বিভিন্ন এলাকাতে তিনি যুদ্ধ করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর সরকার তাকে মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের তার সনদ নং ম-১২৩৫৮০, মুক্তিবার্তা নং (লাল বই) ০৪০৫০৭০১১১৮, গেজেট নং ২৫৯৪।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার যখন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ৫শ টাকা দিতেন সেই সময় হতে তিনি ভাতা পেয়েছেন। এরপর সেই ভাতা বাড়তে বাড়তে ১০ হাজার টাকা হলো তখনও তিনি ভাতা পেতেন। কিন্তু হঠাৎ করে ৩ বছর তার ভাতা বন্ধ। মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে আমি মুক্তিযোদ্ধা না তাই ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় কারও নাম উল্লেখ না করলেও ক্ষোভের সাথে বলেন, চৌগাছা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ির কারনে আমরা অনেকেই যারা যুদ্ধ করেছি তারা আজ অবহেলীত, সব কিছু থেকে বঞ্চিত।

ছোট্ট শিশুর মত কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, চরম অভাব অনাটনের মধ্যে বসবাস করছি। নিজের কোন জায়গা জমি নেই, অন্যের জমিতে একটি ঝুঁপড়ি ঘর করে কোন রকমে সেখানে বসবাস করছি। স্ত্রী জাহানারা বেগম (৭০) হার্টের রোগী শয্যসয়ী আছে। তার ওষুধ আর নিজের বেঁচে থাকার তাগিদে এই বয়সে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিয়েছি। মানুষের কাছে হাত পাততে বড়ই কষ্ট লাগে তারপরও পরিস্থিতির শিকার, সারা দিন হেটে হেটে ২ থেকে ৩শ টাকা আয় হয়, সেই টাকার ওষুধ কিনে বাড়িতে ফিরি। আর কিছু না হোক মৃত্যুর আগে অন্তত যোগ্য সম্মানটুকু নিয়ে যেন কবরে যেতে পারি এই প্রত্যাশা বৃদ্ধ অহেদ আলীর।

এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অহেদ আলীর ভাতা বন্ধ করেছে মন্ত্রনালয়, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা এটি মন্ত্রনালয়ে প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয় তাকে দুইবার সুযোগ দিয়েছেন, সেই সুযোগও তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। অহেদ আলীর মত উপজেলাতে আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ আছে বলে তিনি জানান।

এপ্রিল ০৩, ২০২১ at ২০:৫৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএমআই/এমআরএইস