বহুমুখী উন্নয়নে বদলে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলাধীন দাসিয়ার ছড়া। ছিটমহল হিসেবে বেশি পরিচিত। ২০১৫ সালে ৬৮ বছরের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বহুমুখী উন্নয়নে বদলে গেছে বিলুপ্ত দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ভারতীয় ১১১ টি ছিটমহলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়া ছিটমহল। মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে রাজা জমিদারদের দাবা-পাশা খেলার তালুক বা মৌজা বাজি ধরার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে ছিটমহল তৈরি হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকে ছিটমহলবাসী নাগরিকত্বহীন হয়ে দূবিষহ জীবন যাপন করতে থাকে।১৯৭৪ সালে ১৬ই মে ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা স্থল সীমান্ত চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের সফল কূটনৈতিক তৎপরতা ২০১৫ সালে ১আগষ্ট ১৫০ নং দাসিয়ারছড়া বিলুপ্ত হয়ে, বাংলাদেশ মুল ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।

নীলকমল নদী বেষ্টিত বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের আয়তন ৬.৬৫ বর্গকিলোমিটার, যার অবস্থান ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন, কাশিপুর ইউনিয়ন ও ভাঙ্গামোর ইউনিয়নের মঝে বিদ্যমান। ২০১৫ সালের ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ হেট কাউটিং রিপোর্ট অনুসারে জনসংখ্যা ৬৫২৯ জন ও ১৩৬৪টি পরিবার রয়েছে।

৬৮ বছরে পিছিয়ে থাকা দাসিয়ারছড়া এখন শুধু উন্নয়ন, দুই চোখ যেদিকে যায় শুধু উন্নয়ন চোখে পরে। অধুনালুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল হস্তান্তরে পরবর্তী উন্নয়ন হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে ২৭.৪০কি.মি, ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে ৩০.০০মিটার, বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে ৭.০০টি, ইউড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে ৩৫টি, শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মান করা হয়েছে ৩টি,কলেজ নির্মান করা হয়েছে ২টি,মাদ্রাসা নির্মান ১টি, মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে ৫টি, কবরস্থান নির্মাণ করা হয়েছে ১টি,প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে ৩টি,শ্নশান নির্মাণ করা হয়েছে ২টি ,মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে ১টি, টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে ৩৩৪টি, কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে ২টি । নির্মাণ করা হয়েছে একটি আইসিটি ভবন।

২৯ মার্চে দাসিয়ারছড়া বহুমূখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নবনির্মিত আইসিটি ভবনের শুভ উদ্বোধন ভিডিও কনফারেন্সেস মাধ্যমে উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্য যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জোনাইদ সিদ্দিকী পলক এমপি।

বিলুপ্ত ছিটমহলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে চায় শহুরে নাগরিক সুবিধাও। এ লক্ষ্য অর্জনে রোববার ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় ডি-সেট সেন্টার চালু করেছে আইসিটি বিভাগ।

যেখান থেকে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসেবা অনলাইনে করা যাবে ভিসা আবেদন। থাকছে মোবাইল ব্যাংকিং আর ভিডিও কনফারেন্সেরও সুযোগ। ৬৮ বছর পিছিয়ে পড়া বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও আন্দোলনকারী নেতা জাকির সরকার জানান, আমার ৬৮ বছর আমাদের স্বাধীনতা ছিল না এখন আমরা স্বাধীন। আগে পিছিয়ে ছিলাম এখন শুধু আমাদের উন্নয়ন আর উন্নয়ন সবকিছু অবদান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমরা দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের মানুষ তার কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবো, আমরা চিরজীবন মনে রাখবে তাকে। দাসিয়ারছড়া উন্নয়ন হচ্ছে। এখন হচ্ছে আরো হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই।

এপ্রিল ০৩, ২০২১ at ১৮:১৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বিএম/এমআরএইস