চৌগাছার খড়িঞ্চা বাওড়ের মাছে মড়ক, দিশেহারা মৎস্যজীবিরা

যশোরের চৌগাছায় খড়িঞ্চা বাওড়ের মাছে মড়ক দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দিন যত যাচ্ছে ততই মাছ মরার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছ মরে পানিতে ভেসে থাকায় পানির দিকে তাকালেই মনে হবে পানিতে সাদা শাপলা ফুল ফুটে আছে। নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেও মড়ক ঠেকাতে না পেরে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন বাওড়ের মৎস্যজীবিরা।

উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নে অবস্থিত খড়িঞ্চা বাওড়, যা স্থানীয় দেবুলয়, স্বরুপদাহ, বহিলাপোতা, খড়িঞ্চা, মাধাবপুর, সাঞ্চাডাঙ্গা ও দিঘড়ী গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহমান। ২৮১ একর বিস্তৃর্ণ এই বাড়ড়ের পানিতে স্থানীয় জেলেরা যুগযুগ ধরে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু ২০২০ সাল হতে বাওড়ে মাছ চাষ করে শুধুই লোকসান গুনতে হচ্ছে মৎস্যজীবিদের। গেল বছরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দিন আনা দিন খাওয়া জেলেদের অপুরোনীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেই ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে না উঠতেই এ বছর মাছে মড়ক দেখা দিয়েছে, যা মহামারী আকারে ধারন করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।

সরেজমিন বাওড়ের মাধবপুর এলাকাতে যেয়ে দেখা যায়, বাওড়ের যতদুর চোখ যায় ততদুর পানির উপর সাদা শাপলা ফুলের মত মাছ মরে ভেসে আছে। শতাধিক জেলে দিন রাত বাওড়ে কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু কোন কিছু যেন কাজে আসছে না।

বাওড়ে কর্মরত জুগোল, উত্তম কুমার, রনজিৎ কুমার, সুবোল, পরিতোষ জানান, এই বাওড়ই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বাপ দাদারা এখানে মাছ চাষ করে গেছেন এখন আমরা চাষ করছি। এ বছর হঠাৎ করে যে ভাবে মাছ মরছে তাতে আমাদের চরম ক্ষতি হবে বলে মনে করছি। কি ভাবে মাছের মড়ক ঠেকানো যায় আমরা সকলেই সেই চেষ্টা করছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। প্রতি দিনই মাছ মরছে আর পানিতে ভেসে উঠছে।

খড়িঞ্চা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক ভরত কুমার বিশ্বাস জানান, প্রতি বছর এসময়ে ভাইরাস জনিত কারনে কিছু মাছ মারা যায়। কিন্তু এ বছর যেন ব্যাপক আকার ধারন করেছে। গত দুই সপ্তাহে না হলেও ৩শ মন মাছ মারা গেছে। সব ধরনের মাছই মারা যাচ্ছে, তবে সিলভার কার্প মাছের সংখ্যাই বেশি। পানি দূষনমুক্ত করতে আমরা ইতোমধ্যে ৫০ কেজি বস্তার ৬০ বস্তা লবণ, পটাশ ৬৫ বস্তা, ব্লিসিং পাউডার ৭০ কেজি এবং অন্য ধরনের পটাশ (ডাক্তারীপটাশ) ৮০ কেজি বাওড়ে প্রয়োগ করেছি। পুরো বাওড়ে সব ধরনের কচুড়িপনা পরিস্কার করা হয়েছে, তারপরও মাছ মরা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা অব্যহত থাকলে মৎস্যজীবিরা চরম ক্ষতি হয়ে যাবে।

সমিতির সভাপতি লক্ষন চন্দ্র বিশ^াস বলেন, ১৪৩ জন সদস্য নিয়ে আমাদের মৎস্য সমবায় সমিতি গঠন। এই সদস্যে গুলোর গোটা পরিবারের সব সদস্য বাওড়ের উপর নির্ভরশীল। এ বছর মাছ যে ভাবে মারা যাচ্ছে তাতে হয়ত আমাদের বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ,এস,এম শাহাজান সিরাজ বলেন, পানিতে অক্সিজেন ঘাটতি হলে মাছ মারা যেতে পারে। বাওড়ে পট কচুড়ি থাকলে তা দ্রুত পরিস্কার করার পাশাপাশি পানিতে পরিমান মত চুন ও লবণ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।