ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছে বীরাঙ্গনা সুভা রানী

ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বীরঙ্গনা সুভা রানী। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, আদিবাসী নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য দুলাল চন্দ্র রায় সহ অনেকেরই দাবি, স্বীকৃতি দেওয়া হোক এই বীরাঙ্গনাকে এবং একই সঙ্গে এই বীরাঙ্গনার পুনর্বাসনেরও দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার ১লা এপ্রিল দুপুরে সুভা রানীর সঙ্গে কথা হয় উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সনকা গুচ্ছগ্রামে। তখন তিনি ভিক্ষা শেষে মাত্র বাড়িতে ফেরেন। এ ব্যাপারে সুভা রানী জানান, ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ২৫ থেকে ২৬ বছর। একদিন হঠাৎ হানাদাররা তাঁকে পিত্রালয় মৃত রশি নাথ ওরফে অশ্বিনাথ রায়ের গ্রামের পাল্টাপুর কুড়িটাকিয়া বাজার পার্শ্ববর্তী শফিকুলের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এসময় বাধা প্রদান করলে মা কুলো বালার চোখে বন্ধুকের বাট দিয়ে আঘাত করে ও বাম হাতে গুলি করে সুভা রানীকে ভাদগাঁও ব্রীজের নিকটবর্তী বাঙ্কারে নিয়ে সম্ভ্রমহানী ও গণধর্ষণের পর ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

সেখান থেকে ফিরে আসার পর গ্রাম্য চিকিৎসক বিশুর সেবা নিয়ে সুস্থ হলেও সমাজ তাঁকে ভালো চোখে দেখেনি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের ১ বছর পর কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুরে সতীনের ঘরে ফৈতু রায়ের সাথে বিয়ে হলে ছেলে লক্ষিকান্ত ও মেয়ে মিনতি বাশমালী জন্ম নেয়। স্বামীর মৃত্যুর পর সুভা রানী ক্ষেত- ক্ষামারে দিনমজুরি করে সন্তানদের লালন-পালন করে অনেক কষ্টে মেয়ে মিনতিকে বিয়ে দেন জয়নন্দের দরিদ্র এক বাদ্য বাদন ব্যাবসায়ীর সাথে, আর ছেলে লক্ষিকান্ত একজন রিক্সা ভ্যান চালক।

ছেলে মেয়ের অভাবি সংসারে ঠাই না হলেও ২০০০ সালে ছেলের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত সনকা গুচ্ছগ্রামের একটি ঘরে মাথা গোঁজার ঠাই হয়ে অদ্যবতি সেখানেই বসবাস করে আসছেন। এখন সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা খাবার আর চাল দেন। অন্যরা সহানুভূতি দেখান ও ভিক্ষা দেন। বয়স বেশির কারণে এখন আর কেউ তাকে কাজে না নেয়ায় নিরুপায় সুভা রানী জীবন ও জীবিকার দায়ে বাধ্য হয়েই ভিক্ষা বৃত্তি পেশায় নেমেছেন। সুভা রানী আরো জানান, তার প্রকৃত জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী জন্ম তারিখ-২০/১২/১৯৪৩ ইং হলেও পরবর্তীতে তথ্য সংগ্রহকারীদের ভুলের কারণে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তাং- ১৮/০৭/১৯৬৭ ইং দেখানো হলে সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক তার প্রাপ্ত বয়স্ক ভাতাদি বন্ধ হয়ে যায়।

তাই বিষয়টির সত্যতা যাচাই- বাছাই পূর্বক তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী সুভা রানী। বীরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কালীপদ রায় বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুভা রানী সহ অনেক মা- বোনকে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোষর দালাল রাজাকারেরা তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

স্বাধীনতার পর যোগাযোগের সমস্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের কথা জানতে ও জানাতে পারিনি। পরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে অনেক কিছুই চাপা পড়েছে। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান, সে তুলনায় যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের সহযোগিতা করা হলে আর কোনো বীরাঙ্গনা শেষ বয়সে এসে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য হবেনা।