পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত

হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচজন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হেফাজতের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় ভাঙচুর চালিয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) এসব ঘটনা ঘটে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশে হেফাজতকর্মীসহ সাধারণ মুসল্লিদের ওপর পুলিশের হামলা ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে মাঠে নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। পুলিশ, হেফাজত এবং ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুলি ছুড়ে পুলিশ। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচজন নিহত হয়। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় হামলা করে তছনছ করে হেফাজতকর্মীরা। এ দুই ঘটনায় অন্তত পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়।

জানা যায়, বিকেল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৫ জন। পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশত। গতকাল বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুরে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী মহাসড়কে অবস্থান করলে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা তাদের ধাওয়া করলে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে ৫ জন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। নিহতরা হলেন নন্দনপুর হারিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে ওয়ার্কশপের দোকানি জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারিউড়া মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২) এবং বুধলের আলী আহমদের ছেলে প্লাম্বার শ্রমিক কাউসার (২৫)। এছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আলী আহমেদের ছেলে কাউসার মিয়া, সাইদ মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন (৩৫), আবদুল সাত্তারের ছেলে বাছির মিয়া (২৮), আবদুল হোসেনের ছেলে ছাদের মিয়াকে (৩৫) হাসপাতালে নেয়া হয়।

অন্যদিকে, সরাইল উপজেলায় স্থানীয়দের বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ অন্তত ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হেফাজত কর্মীদের হামলায় ক্যাম্পে থাকা ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সরাইল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন জানান, বিক্ষোভ মিছিল থেকে হঠাৎ করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়।

এদিকে, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুপুরে হেফাজতের ব্যানারে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মী ভাঙ্গা থানা ঘেরাও করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। হেফাজতের তাণ্ডবে একটি পুলিশ ভ্যান ও দুইটি মোটরসাইকেলসহ সার্কেল অফিস, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়সহ থানায় প্রবেশের মেইন গেট ভেঙে চুরমার করা হয়। হাজারো মুসল্লির সামনে গুটি কয়েক পুলিশ ৪৫ রাউন্ড গুলি বিস্ফোরণ করলেও তা উপেক্ষা করে তাণ্ডব চালায় হেফাজতের কর্মীরা।

খবর পেয়ে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান, র‌্যাব-৮ এর কোম্পানি অধিনায়ক খোরশেদ আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই আমরা উপজেলাব্যাপী নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন মসজিদে আলোচনাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের আক্রমণে আমাদের ৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা থানার অভ্যন্তরে ও মেইন গেট ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, ধর্মভিত্তিক দলের নেতাকর্মী ও মুসল্লিদের একটি অংশের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হাটহাজারীতে চারজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। তারই রেশ ধরে আজ রবিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম।