‘ফায়ারিং স্কোয়াড’ শব্দটি আইনের কোথাও নেই

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দুই দশক আগে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ১৪ আসামির সবাইকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে কোনো কারণে সম্ভব না হলে প্রচলতি নিয়মে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।

‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আদালতের রায়ের বিষয়ে আইনজীবীরা বলেছেন, ‘ফায়ারিং স্কোয়াড’ শব্দটি রায় কার্যকরের বিশেষ ক্ষমতা আইন অথবা ফৌজদারি আইন কোথাও উল্লেখ নেই। এছাড়া এর আগে এরকম রায় আরো দুই-একটি হলেও কার্যকরের নজির নেই। সব সময় ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, ২০১৫ সালের ৯ জুন যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারে প্রথম আসামি হিসেবে কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার পলাতক হাসান আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা মৃত্যু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রণালীর উল্লেখ নেই। কিন্তু ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। আর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩৪(ক) ধারায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা মৃত্যু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে দণ্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং আমাদের বিচারে দেখা যাচ্ছে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা অভিযুক্তের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলি চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যেতে পারে। এছাড়া এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর পাঁচজনকে ফাঁসিতেই ঝোলানো হয়।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, নিম্ন আদালত রায় দিয়েছে, তারা যে কোনো রায় দিতে পারে। তবে রায় কার্যকরের আগে বিষয়টি উচ্চ আদালতে যখন আসবে, তখন বিজ্ঞ বিচারকরা সেটি নিশ্চই পর্যালোচনা করবেন, এবং সেখানে উভয়পক্ষের শুনানিতে আইনের সঠিক ব্যাখ্যা উঠে আসবে।

এদিকে বাংলাদেশের কোনো আইনেই ফায়ারিং স্কোয়াড বলতে কোনো শব্দ নেই বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে গুলি চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা আছে জানালে তিনি বলেন, সেটি কার্যকর হবে যদি বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় মামলা হয়, তখন সেটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। তাছাড়া সেখানেও তো ‘ফায়ারিং স্কোয়াড’ শব্দটি উল্লেখ নেই।

তবে তিনি এও বলেন, যেহেতু বিচারক ফায়ারিং স্কোয়াড শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তাই আমি বলতে পারি, এ শব্দটা কোথাও নেই। ফলে এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারা যদি এ মামলায় না থাকে ওই ধারাটি এখানে কার্যকরের সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রায়টাতো বিচারিক আদালত দিয়েছে, অনেক রায়-ই তো বিচারিক আদালত দেয়। সেটা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়ে কী হবে, এখনি তো বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে আসলে সেখানে উভয়পক্ষের শুনানিতে আইনের ব্যাখ্যাগুলো উঠে আসবে। তখন সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।

ref: bhorerkagoj