প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় একমাত্র কন্যা সন্তানকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছে মা-বাবা

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের রাজাবাড়ি গ্রামে রূপচাঁন মিয়া ও তার স্ত্রী ফারজানা তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় তাকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের রাজাবাড়ি গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে রূপচাঁন মিয়ার সাথে একই উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের নয়াচর গ্রামের গোলাপ মিয়ার মেয়ে ফারজানার সাথে ২০১৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের বিয়ের প্রায় ২ বছর পর তাদের দাম্পত্য জীবনে জন্ম নেয় এক কন্যা শিশুর। যার নাম তাবিয়া।

তাবিয়ার জন্মের প্রায় ৩ বছরের মাথায় পরিবার যখন বুঝতে পারে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। তখন থেকেই নেমে আসে তার জীবনে ঝড়।
প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়াই যেন সবচেয়ে বড় পাপ ছিল তাবিয়ার। স্বপ্ন হয়তো তারও ছিল আর দশটি বাচ্চাদের মতো মা-বাবার স্নেহে ভালোবাসায় হাসবে খেলবে কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে যাবে। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় বঞ্চিত হলো মা-বাবার ভালোবাসা থেকেও।

মা-বাবার অবহেলায় ২টি বছর কেটে গেলেও প্রায় ৩ মাস আগে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে রাস্তায় তাবিয়াকে ফেলে রেখে চলে যায় তাবিয়ার মা-বাবা।

তারপর থেকে অদ্যাবদি পর্যন্ত বৃদ্ধা দাদীর কাছে বড় হচ্ছে তায়িবা। কথা বলতে ও শুনতে না পাড়ায় তাকে লালন-পালন করতেও কষ্ট হয়ে পড়ছে বৃদ্ধ দাদী সুফিয়া বেগমের। পরিবারের অসচ্ছলতা ও দারিদ্রতার কারণে বাসার বাইরে গেলেও তাবিয়াকে ঘরের খুটির সাথে বেঁদে রাখতে হচ্ছে।
এদিকে কোনো জায়গায় তাদের খোঁজ না পেয়ে তাবিয়ার মা-বাবাকে ফিরিয়ে পেতে ২০২০ সালে ৩০ ডিসেম্বর নরসিংদী পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে মেয়েটির দাদী সুফিয়া বেগম।

প্রতিবন্ধী তায়িবার দাদী সুফিয়া বেগম জানান, তাদের একমাত্র মেয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ায় তাকে ফেলে রেখে চলে গেছে আমার পুত্র ও পুত্রবধূ। এছাড়াও তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ও আমার স্বামী দুজনেই বৃদ্ধ আমার স্বামী কোনো রকম কাজ কর্ম করতে পারে না। আমি টুকটাক কিছু করে দিন আনি দিন খাই। আমার পক্ষে তাবিয়ার ভরণ পোষণ কষ্ট হয়ে পড়েছে। সারাটা জীবন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেও আজ শেষ বয়েসেও নিস্তার নেই। তাবিয়ার মা-বাবাকে ফিরে পেতে পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ খবর পেলাম না তাদের। তিনি আরও বলেন, তাবিয়াকে যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হতো তাহলে হয়তো কষ্টের কিছুটা হলেও কম হতো।

প্রতিবন্ধী তায়িবার চাচা আশরাফুল হাসান বাবুল বলেন, তায়িবা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বৃদ্ধা দাদীর পক্ষে তার সেবা যত্ন লালন-পালন করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। তাবিয়ার দাদী যদি অসুস্থ থাকে তাহলে হাসপাতালেও নিতে হলেও বিলম্ব ঘটে কারণ তাবিয়াকে কোথায় রেখে যাবে তারা। এছাড়াও তাবিয়ার চাচা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রতিবন্ধী তায়িবার ভরণ পোষণ বা সরকারি সহযোগিতা পেলে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে বৃদ্ধা দাদীর এবং চিকিৎসা সেবায় সে অনেকটা সুস্থ্যতা ফিরে পেতে পারে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।