নকলায় জমি জটিলতায় দেড় যুগও শেষ হয়নি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ

অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হওয়ার পর জমি সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ হয়ে আছে শেরপুরের নকলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণকাজ। শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জাবেদ মোহাম্মদ তারেক জানান, ২০০৬ সালে প্রথম জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তহবিলে জমাও আছে। মালিকানা দাবিদাররা ওই টাকা না নিয়ে ২০০৬ সালে বিচারিক আদালতে মামলা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, জমি নিয়ে আদালতে চলমান মামলার নিষ্পত্তি হলে নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে।

বিএনপির আমলে ২০০৬ সালে নকলা পৌর এলাকায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে ফায়ার সার্ভিস দপ্তর। ওই বছরেই ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭২৪ টাকা ব্যয় ধরে শুরু হয় নির্মাণকাজ।

জেলার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের তথ্যে জানা যায়, সে সময় যে জমির ওপর নির্মাণকাজ শুরু হয় সেটি নিজেদের নামে রেকর্ড করা বলে দাবি করেন দুই ভাই কেশব প্রসাদ ও দুধনাথ প্রসাদ। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে তাতে বাধা দেন কেশব ও দুধনাথ। পরে স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণ শুরু হয়।

শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জাবেদ মোহাম্মদ তারেক জানান, ২০০৬ সালে প্রথম জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তহবিলে জমাও আছে। মালিকানা দাবিদাররা ওই টাকা না নিয়ে ২০০৬ সালে প্রথমে বিচারিক আদালতে মামলা করেন। পরে ২০১২ সালে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। এর পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় কাজ। গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বন্ধ হওয়ার আগে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছিল।

জমি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় জমির মালিকানা দাবি করা দুধনাথকে। তিনি বলেন, বিএনপির তৎকালীন হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরী জমি অধিগ্রহণ না করে স্টেশনটির কাজ শুরু করায় তারা মামলা করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
নকলার কোথাও আগুন লাগলে শেরপুর সদর, জামালপুর বা ময়মনসিংহ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে ডেকে আনতে হয়। স্থানীয়দের মতে, এতে অনেক সময় লাগায় আগুনে ক্ষতি বেশি হয়।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় এই ফায়ার সার্ভিসটা হচ্ছে না। আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’

পৌর এলাকার বাসিন্দা নাদিম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের ফায়ার সার্ভিস না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। ক্ষতিও হচ্ছে অনেক। তাই সরকারের কাছে দাবি, দ্রুত যেন এ ফায়ার সার্ভিসটা করে দেয়।’

কিছুদিন আগে আগুন লাগে পৌর এলাকার মাহমুদা বেগমের বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘আমার ঘরের কিছুই বাঁচাবার পাই নাই। আমার ১০ লাখ টেহার মালামাল পুইরা গেছে।’

আরেক ভুক্তভোগী রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমার বাড়িডা পুইরা শেষ অইয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস থাকলে এমনডা অইত না।’

স্থানীয় লোকজনের সুরে কথা বললেন নকলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদারও। তিনি বলেন, ‘নকলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অথচ যন্ত্রপাতি ও লোকবল সব অনুমোদন আছে। শুধু কাজ শেষ করাটাই বাকি আছে। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।’

ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, মামলার নিষ্পত্তি হলেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে। নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নকলা উপজেলায় আড়াই লাখের বেশি মানুষের বসবাস।

মার্চ ১০, ২০২১ at১০:৪৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আরআইবি/এমআরএইস