বিগত ধাপের পৌরনির্বাচনের মতো পঞ্চম ধাপেও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও বিরোধী প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৩০ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সবকটি পৌরসভায় একেযোগে সকাল ৮টায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকালের দিকে ভোটারের সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার লাইনও বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে উত্তেজনাও। দুপুরের পরে প্রার্থী ও তার সমর্থক বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা হাতাহাতি-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে সেখানেই এক সমর্থকের মৃত্যু ও সারা দেশে শতাধিত আহত হন।
এদিকে পঞ্চম তথা শেষ দফা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে যথারীতি দাবি করেছেন ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খন্দকার। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। এদিকে ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, অন্য ধাপগুলোর মতো পঞ্চম ও শেষ ধাপেও অধিকাংশ পৌরসভায় (২৭টিতে) আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া বিএনপির একজন ও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
বিজয়ী যারা:
২৭ পৌরসভায় বেসরকারীভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হলেন- চট্টগ্রামের বারইয়ারহাটে রেজাউল করীম খোকন, রাঙ্গুনিয়ায় শাজাহান শিকদার, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে গিয়াস উদ্দীন রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে আবদুর রশীদ খান, হবিগঞ্জ সদরে আতাউর রহমান সেলিম, জামালপুর সদরে ছানোয়ার হোসেন ছানু, মাদারগঞ্জে মির্জা গোলাম কিবরিয়া, ইসলামপুরে আবদুল কাদের, রাজশাহীর দুর্গাপুরে তোফাজ্জল হোসেন, চারঘাটে একরামুল হক, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে আবু নঈম মো. বাশার, কিশোরগঞ্জের ভৈররে ইফতেয়ার হোসেন বেনু, ভোলার সদরে মনিরুজ্জামান মনির, চরফ্যাশনে মোহম্মদ মোরশেদ, চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে আবদুল লতিফ, মতলবে আওলাদ হোসেন লিটন, যশোরের কেশবপুরে রফিকুল ইসলাম মোড়ল, নীলফামারীর সৈয়দপুরে রাফিকা আক্তার জামান, মাদারীপুর সদরে খালিদ হোসেন ইয়াদ, মাদারীপুরের শিরচরে আওলাদ হোসেন খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে নায়ার কবির, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আশরাফুল আলম, মহেশপুরে আবদুল রশীদ খান, জয়পুরহাট সদরে মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহের নান্দাইলে রফিক উদ্দীন ভঁইয়্যা, গাজীপুরের কালীগঞ্জে এস এম রবিন হোসেন।
অন্যদিকে বগুড়া সদরে বিএনপির রেজাউল করিম বাদশা, রংপুরের হারাগাছায় স্বতন্ত্র এরশাদুল হক এবং শরীয়তপুরে স্বতন্ত্রপ্রার্থী রেজাউল করিম রাজা বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লার দেবীদার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
২ জনের মৃত্যু:
গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম রয়েলের সমর্থকের সঙ্গে অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ছোটন নামে একব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এখানকার সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালীর সেনবাগের কেশারপাড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একটি ওয়ার্ডের মেম্বার পদে উপনির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে খোরশেদ আলম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে রাজশাহীর চারঘাটে ককটেল বিস্ফোরণে দুজন পুলিশ আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় চারজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্র এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পথচারীরাসহ ভোটাররাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিস্ফোরণের পরই কেন্দ্রটিতে ভোটারদের উপস্থিতি কমতে থাকে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেদে সম্প্রদায়ের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসলাম নামে এক যুবক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বিএনপি-জাপার ভোট বয়কট:
এদিকে নির্বাচনে কারচুপি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ ভোট দিতে বাঁধাদানের অভিযোগ এনে অনেকগুলো পৌরসভায় বিএনপি-জাপা মেয়র প্রার্থীরা ভোট বয়কট করেন। ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে হইচই করার অভিযোগে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী ও এক ভোটারকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভিন। বেলা ১১টার দিকে নান্দাইলের শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়।
প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন মহেশপুর পৌরসভার বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম খান চুন্নু। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এছাড়া সমর্থদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট দিচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে, বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নীলফামারী পৌরসভার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিদ্দিকুল আলম। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনারের কাছে পুননির্বাচন দাবি করেন।
রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভা নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ’ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে করবে সরকার, নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু দেখা গেল নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ’ হচ্ছে না। ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে বিএনপি আর অংশ নেবে না।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়, গতকাল দেশের ৩০টি পৌরসভা ছাড়াও চারটি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান এবং ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন পদে উপনির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনেরও ভোটগ্রহন করা হয়েছে এদিন।
