ঠাকুরগাঁওয়ে আমের মুকুলে শোভা পাচ্ছে আম বাগান

বইচ্ছে ফাগুন হাওয়া, গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল, মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে প্রতিটি আম গাছ। ফাগুন হাওয়ায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাগানজুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন আর মুকুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ করেছে প্রকৃতি প্রেমীদের। জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তার। ভাষায় যথাযথ ছবি ফোটানো না গেলেও আমের গাছে এমন মুকুল ফোটা দৃশ্য এখন সারা বাংলা জুড়ে শহর ও গ্রামগঞ্জে। সারি সারি আমগাছে যেন হলুদ আর সবুজের মিলনমেলা।

পাক-ভারত উপমহাদেশে আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক আগে থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে আসছে। ব্রিটিশ ভারতের ‘বাঙালা প্রদেশে’ তথা বর্তমান বাংলাদেশে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়। রয়েছে বাহারি আর মন মাতানো তদের নাম যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি।

বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও এলাকায় আম চাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগ তথ্য মতে,চলতি বছর আম বাগানের পরিমাণ ১০ হাজার ৪০ হেক্টর। আর আম বাগানের সংখ্যা ৪ হাজার। বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এ জেলার মাটি তুলনামূলক উঁচু এবং মাটির প্রকৃতি বেলে দো-আঁশ। এসব জমিতে কয়েক বছর আগেও চাষিরা গম,ধান,পাট ইত্যাদি আবাদ করতেন। কিন্তু ধান-গম আবাদ করে তেমন একটা লাভবান হওয়া যায় না। তাই ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল এলাকায় ব্যাপক আম বাগান গড়ে উঠেছে।

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ-হরিপুর সড়কে গেলে এখন চোখে পড়বে রাশি রাশি আম বাগান। ওইসব এলাকার রাস্তা দিয়ে যেতেই এখন অসংখ্য আম বাগান চোখে পড়ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার বিখ্যাত আমের নাম সূর্যপূরী। এটি সাধারণত বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় চাষ হয়। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী এলাকায় রয়েছে বিশাল একটি আম গাছ।

প্রায় ২ বিঘা জমি জুড়ে গড়ে ওঠা ওই আম গাছকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ভীড় জমে ওঠে। এই গাছের আমটি সূর্যপূরী। এ আম ইতোমধ্যে সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। পাতলা আঁটি আর সুমিষ্ট গন্ধ যেন মন কেড়ে নেয়। এছাড়াও একবিঘা জমিতে অন্যান্য ফসল উৎপাদন করে যে লাভ হয়, আম বাগান করে তার চাইতে কয়েকগুণ লাভবান হওয়া যায় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুর রহমান বাদশা।

তিনি জানান, প্রতি বছরই তার বাগান থেকে সারাদেশে বিষমুক্ত আম সরবরাহ করেন। তার মতো অনেক বেকার যুবক এখন বাণিজ্যিকভাবে আম্রপালি আমের বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এসব বাগানে গাছ লাগানোর ২/৩ বছরের মধ্যেই আম পাওয়া যায়। লাগাতার ফল দেয় ১০/১২ বছর। ফলনও হয় ব্যাপক।

শুধু আম্রপালি ছাড়াও এ এলাকায় হাড়িভাংগা,গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি ও হিমসাগর আমের আবাদ হচ্ছে। বাগানগুলোতে আম গাছের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে গমসহ অন্যান্য ফসলেরও আবাদ করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছে। অনেকে বাগান করে আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীদের কাছে। বড় বড় অনেক আম বাগান দুই-তিন বছর কিংবা তার অধিক সময়ের জন্য অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। কিছু বাগান বিক্রি হয় মুকুল দেখে। আবার কিছু বাগান বিক্রি হয় ফল মাঝারি আকারের হলে। বাগানের পাশ দিয়ে হাঁটলেই মুকুলের ঘ্রাণে মন প্রাণ ভরে ওঠে।

বাগান ব্যবসায়ী এরশাদ আলী জানান,গত বছরের মতো এ বছর আবহাওয়া ভালও থাকায় এবার ব্যাপক মুকুল দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা বলছেন, মুকুল দেখে আশা করা যায় এবার আমের ব্যাপক ফলন হবে। শিলাবৃষ্টি বা ঝড় না হলে ব্যাপক আমের ফলন পাওয়া যাবে বলে জানান তারা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. মনজু আলম সরকার জানান, ছত্রাকে যাতে মুকুল নষ্ট না হয় সেজন্য কীটনাশক হিসেবে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মুকুল গুটিতে পরিণত হওয়ার সময় একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যপূরী আম সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার আমে পোকা থাকে না। এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার দেখতে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং কালবৈশাখী বা ঝড় না হলে ব্যাপক ফলন আশা করা যাচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১ at১৭:২৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এএ/এমআরএইস