ঝিনাইদহে এবার সেনাবাহিনী জামায়কে দেখিয়ে শাশুড়ির প্রতারণা

সেনাবাহিনী জামাইয়ের বিভিন্ন কারণে টাকার প্রয়োজন দেখিয়ে গ্রামের সহজ সরল দিন মুজুরি করে খাওয়া অভাবী লোকদের এনজিও থেকে লোণ করে আনা টাকা প্রতারনা করে নিয়ে পালিয়েছেন জুলেখা খাতুন নামে ঝিনাইদহের এক প্রতারক।

এনজিও থেকে লোণ নিয়ে কেউ কাগজের প্যাকেট তৈরি করে বিভিন্ন দোকানে দোকানে দিয়ে তা থেকে যা রোজগার হবে তাই দিয়ে কোন মতে দুটো ডাল ভাত খেয়ে জীবন যাপন করে। এমন অসহায় মঞ্জুরানী দম্পত্তি যখন ব্রাক এনজিও থেকে ৩৫ হাজার টাকা লোণ তুলে ঘরে বসে স্বপ্ন বুনছে, খবর পেয়ে ঠিক সেই মুহূর্তে প্রতারণার হাত নিয়ে তাকে অধিক লাভের আশ্বাস দিয়ে সেই আশ্বাসটাকে দীর্ঘশ্বাসের কারণ বানিয়ে রাতের আধারে লোপাট কেটেছে জুলেখা বেগম নামে এক প্রতারক।

মৃতঃ ছিদ্দিক আলীর ছেলে আলতাফ ভুইয়া জানান, গত ১ বছর আগে জুলেখা তার কাছে বাড়ী সহ ১২ শতক জমি বিক্রি করবে বলে ৫ লক্ষ টাকা ঠিক হয়। তিনি বলেন, ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জুলেখার দিয়ে বাকি ২০ হাজার টাকা ঐ জমি রেজিস্ট্রি করে দেবে বলে স্থানীয়দের সাক্ষী রেখে একটি ষ্ট্যাম্পে লিখে রাখা হয়। কিন্তু জুলেখা ঐ জমি তাকে রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে, তার সেনাবাহিনীতে চাকরী করা জামাই মাছুদুর রহমানের নামে গোপনে লিখে দিলে জামাই মাছুদুর রহমান পরবর্তীতে অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেয়।

একই গ্রামের জোৎস্না খাতুন বলেন, তার কাছ থেকে প্রায় ১ বছর আগে জুলেখা নামে ঐ প্রতারক তার জামাই মাসুদের টাকা প্রয়োজন বলে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ১ বছর ধরে ঘুরাচ্ছে । কিন্তু তার টাকা না দিয়ে গোপনে বাড়ী, জায়গা-জমি সব বিক্রি করে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছে। টাকার শোকে জোৎস্না এখন দিশে হারা হয়ে বেড়াচ্ছেন।

একই গ্রামের মঙ্গল মিয়া জানান, জামাই গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছে কিছু টাকা কম পড়াই জমিটা রেজিঃ করতে পারছেনা তাই তার টাকার প্রয়োজন এমন কথা বলে প্রথমে তার কাছ থেকে ১ মাস পর টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা নেয়। পরে কথামত টাকা না দিতে পেরে এই টাকার লাভ হিসাবে প্রতি বছর ধান দেওয়ার কথা বলেন, কিন্তু ধান টাকা কোনটায় তাকে না দিয়ে পালিয়েছে।

মৃতঃ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আফিল উদ্দিন ভুইয়া নামে একই গ্রামের আরেক ব্যাক্তি বলেন, জুলেখা তার চাচাতো বোনের মেয়ে। তার কাছ থেকেও জুলেখা ৩৪ হাজার টাকা জামাইয়ের কথা বলে নিয়েছে।

এছাড়াও তোয়াজ উদ্দিন ভুইয়ার স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের কাছ থেকে এনজিও থেকে লোণ তুলে দেবে বলে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকা আজ দেয় কাল দেয় বলে ১ বছর ঘুরিয়েছে কিন্তু টাকা দেইনি। তিনি বলেন, তার মত অনেকের কাছ থেকে এরকম প্রতারণা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

জুলেখা বেগম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের ছলেমান প্রধানীয়ার মেয়ে ও কালিগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মৃতঃ মজিদের ছেলে খালেকের স্ত্রী বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জুলেখার জামাই মাছুদুর রহমানের সাথে মুঠো ফোনের মাধ্যমে কথা হলে তিনি বলেন, আমার শাশুড়ি অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে আমি জানি। এরপর নিজেকে ব্যাস্ত দেখিয়ে মোবাইল রেখে দেন।

ঘটনার বিষয়ে ঐ এলাকার ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতারক জুলেখার জামাই সেনাবাহিনীতে চাকরি করে, এই ভয়ে দরিদ্র ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইনের সহযোগিতা নিতেও ভয় পাচ্ছেন বলে তারা জানান।

এদিকে কালিগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামের আব্দুল খালেক তার স্ত্রী জুলেখার এসমস্ত প্রতারণার খবর পেয়ে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের ইতি টেনেছেন বলেও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তাছাড়া জূলেখা বর্তমান কোথায় অবস্থান করছেন এর সঠিক সন্ধান কেউ দিতে পারছেন না। তবে ভুক্তভোগীরা মনে করেন জূলেখা তার মেয়ে জামায়ের কাছেই আত্মগোপন করে আছেন।

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১ at১৯:৩০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কেএল/এমএসএইস