যশোরে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কেন্দ্রের সামনে রীতিমতো ভিড় জমছে

ভয় কাটিয়ে যশোরে এখন ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করছেন উপযুক্ত ব্যক্তিরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, টিকাদান কেন্দ্রের সামনে রীতিমতো ভিড় জমে যাচ্ছে। সেই ভিড় দেখে কেউ কেউ ভোটের মাঠের দীর্ঘ লাইনের সাথে তুলনা করেছেন। এদিকে, সারা দেশের মতো শনিবার থেকে যশোরেও টিকাদান কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশনের কোন বুথ থাকবে না। টিকা নিতে আগ্রহীদের নিজ দায়িত্বে রেজিস্ট্রেশন করে কেন্দ্রে টিকা গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।

অন্যদিকে চলমান করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রমে পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবার জেলায় পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদেরও উৎসবমুখর পরিবেশে লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে দেখা গেছে। তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই সকলে সুস্থ শরীরে বাড়িতে ফিরেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনে জেলায় চার হাজার ৩৭ জন সিনিয়র সিটিজেন, চিকিৎসক-সেবিকা, গণমাধ্যমকর্মী ও সম্মুখযোদ্ধারা করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ২৫২ জন ও মহিলা এক হাজার ৭৮৫ জন টিকা নিয়েছেন। জেলায় ১১টি কেন্দ্রে ৩৬ টিম টিকা প্রদান করছেন। অধিকাংশ টিকা কেন্দ্রে এ দিন আগের চার দিনের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। সব থেকে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কেন্দ্রে। জেলায় সর্বোচ্চ এক হাজার ৯৮৮ জন করোনার টিকা নিয়েছে এই কেন্দ্র থেকে।

সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘টিকা কেন্দ্রের সামনে রেজিস্ট্রেশন বুথ থাকায় অতিরিক্ত ঝামেলা হচ্ছে। এ জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী শনিবার থেকে জেলায় কোন কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন বুথ থাকবে না। এতে করে টিকা নিতে আসা সকলে সুন্দর পরিবেশে টিকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন। জেলার প্রতিটি কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে লাইনে দাঁড়িয়ে সকলে টিকা নিচ্ছেন।’

বৃহস্পতিবার টিকা নেওয়ার পর যশোরের গণমাধ্যমকর্মী লাবুয়াল হক রিপন, ইমরান হাসান পিংকু ও মীর মঈন হোসেন মুছা জানান, আগে অনেক ভয় ছিলো। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে টিকা নেওয়ার পরে ভয় কেটে গেছে। সুন্দর পরিবেশে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা নেওয়ার পরে একটু মাথা ব্যাথা হয়েছিলো। পরে ঠিক হয়ে গেছে।

এদিকে যশোর পুলিশ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মী সুনীল ঘোষ। তিনি জানান, ঝামেলা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে টিকা প্রদান করেছেন। এখানে নিরিবিলি পরিবেশে টিকা নিয়ে ভালো লাগছে।

অপরদিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে আসা সার্কিট হাউসপাড়ার নাসরিন সুলতানা জানান, প্রথম দিকে টিকা ভয় লাগছিল। এখন অন্যান্য মহিলারা টিকা নিচ্ছেন দেখে আমিও আজ টিকা নিয়েছি।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, পঞ্চম দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট ১৭ হাজার ৬৭৫ জন অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে জেলায় মোট আট হাজার ৯৬৮ জন ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন। এখনও আট হাজার ৭০৭ জন টিকা নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, ‘পঞ্চম দিনে হাসপাতাল থেকে এক হাজার ৯৮৮ জন টিকা নিয়েছেন। এদিন হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের একটু বেগ পোহাতে হয়েছে। সকাল থেকে হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রের সামনে বিভিন্ন পেশার মানুষ টিকা নিতে অপেক্ষা করেন। লাইন এতোটাই দীর্ঘ যে হাসপাতালের মধ্য প্রধান গেট ছাড়িয়ে করোনারী কেয়ার ইউনিটের সামনে পৌছায়। ফলে হাসপাতালের অতিরিক্ত টিম ব্যবহার করতে হয়েছে। এদিন জেলায় টিকা গ্রহণকারী কারো সমস্যার দেখা দেয়নি বা কোন সমস্যা নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। তবে কেন্দ্রের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এক মহিলা মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে তিনি সুস্থ হয়ে টিকা নিয়ে বাড়ি যান।

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১ at১৮:৪৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসকে/এমআরএইস