মাঠ গরমের চেষ্টা করছে বিএনপি

দুই ইস্যুতে মাঠ গরমের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তবে তাদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ। আর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিল ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে দু্ই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে গত দুদিন ধরে রাজপথে প্রতিবাদেমুখর একসময়ের প্রধান বিরোধী দলটি।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘বিএনপি মাঠে নেই’ বলে দাবি করা হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতাকর্মীদের বিএনপি’র কর্মসূচির বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আন্দোলন বা প্রতিবাদের নামে বিএনপির যে-কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রমের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে।

দুই ইস্যুতে দীর্ঘদিন পর রাজপথে দেখা গেছে বিএনপিকে। গতকাল বৃহস্পতিবারও তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়েছে। নড়াইল আদালতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাতক্ষীরার আদালতে দলের প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ১০ জন এবং পাবনার ৪৭ নেতাকর্মীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দেওয়া এবং দলের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। একই ধরনের কর্মসূচি হয়েছে সারা দেশের সব মহানগর ও জেলায়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দাবি করেন, দুই ইস্যুতে দেশের জনগণ ফুঁসে উঠছে। জনগণের আন্দোলনে একদিন সব স্বৈরাচারী শাসকের সরকারের মতো এই সরকারেরও পতন হবে। আর বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দাবি, প্রধানমন্ত্রী এখন ‘আলজাজিরা ভাইরাসে’ আতঙ্কগ্রস্ত। এ ভাইরাসকে কাউন্টার করার জন্য নতুন নাটক তৈরি করা হচ্ছে।

এর আগে গত বুধবার রাতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মশাল মিছিলও বের করে বিএনপি। তবে মিছিলটি খুব বেশিদূর এগুতে পারেনি পুলিশের বাধার মুখে। পরে যুবদল নেতা শরিফসহ ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় বিএনপির শীর্ষ ২৯ নেতাসহ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে বিএনপির রাজপথে না থাকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। গত মঙ্গলবার ভিডিও কনফরেন্সে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তিনটি ব্রিজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা শুনতে শুনতে জনগণ এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আন্দোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতেই তাদের ১২ বছর কেটে গেল।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপির আন্দোলন-প্রতিবাদ নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করা হলেও বিএনপির যে-কোনো কর্মসূচির প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রাখা হয়। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার কথা বলা হয়। গত দুদিন রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচির বিরুদ্ধে মিছিলও করেছে ছাত্রলীগসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপির প্রতিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, কোনো কিছু না পেয়ে আইনগত একটা বিষয়কে তারা রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যে-কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময়ই সজাগ থাকে।

অন্যদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, জনসাধারণের জানমালে নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত হয় এমন যে-কোনো ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সবসময়ই সতর্ক থাকে পুলিশ।