সীমান্তের বার্তা বাহক সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আর নেই

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের বার্তা বাহক হিসেবে এখানকার সাংবাদিক মহলে অধিক পরিচিত সিনিয়র সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) আর আমাদের মাঝে নেই। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতের কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জানিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালের দিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমকে দেশে ফেরত আনার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে দৌলতপুরের সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী প্রাগপুর ইউনিয়নের মহিষকুণ্ডি সীমান্তের বাসিন্দা উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম মাসখানিক আগে হঠাৎ করেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষায় লিভারের জটিল রোগ ধরা পড়ে। এরপর সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি লিভারের জটিল সমস্যা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে যান। তাকে ভারতের কলকাতায় কয়েকটি হাসপাতালে নেয়া হলে শারীরিক পরীক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকরাও তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন। সর্বশেষ দেশটির পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানকার চিকিৎসকরাও অপারগতা প্রকাশ করে একইভাবে হাল ছেড়ে দেন। সাংবাদিক জাহাঙ্গীর পান ও জর্দার প্রতি প্রচণ্ড আসক্ত ছিলেন। পান সঙ্গে নিয়েই সব জায়গায় যেতেন তিনি। ফলে সব সময়ই তাকে পান চিবতে দেখা যেত। অতিমাত্রায় পান-জর্দা খাওয়ার কারণেই তার লিভারে জটিল রোগ সৃষ্টি হয় বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।

চিকিৎসকদের পরামর্শে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমকে বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হচ্ছিল। যশোরের বেনাপোল সীমান্তের কাছাকাছি এসে পৌঁছলে বেলা সাড়ে ৯টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিন্তু ভারতীয় ভূখণ্ডে তিনি মৃত্যুবরণ করায় পরে তাকে আবারো কলকাতায় ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দেশে নিয়ে আসা হতে পারে বলে সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী মহিষকুণ্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাহেলা আক্তার মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন।

এদিকে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুতে দৌলতপুরের সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দৌলতপুর প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক আজকালের খবর ও স্থানীয় দৈনিক বাংলাদেশ বার্তার উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তার এই অকাল প্রয়াণে দৌলতপুর প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট এমজি মাহমুদ মন্টু এবং ক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা যেন খুব দ্রুত শোক কাটিয়ে ওঠেন সেই জন্য সৃষ্টিকর্তার কৃপা প্রার্থনা করেছেন। শোক প্রকাশ করেছেন এখানকার অপরাপর সাংবাদিক সংগঠনের নেতারাও।

পানাসক্ত কিংবা পানপ্রিয় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সীমান্ত হত্যা ও বিজিবি-বিএসএফের মধ্যেকার বিভিন্ন তৎপরতার তথ্যসহ সীমান্তের সব ধরনের খবরাখবর এখানকার সহকর্মী সাংবাদিকদের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছে দিতেন। এ কারণে দৌলতপুরের সাংবাদিক মহলে সীমান্তের বার্তা বাহক হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন।

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১ at২২:১২:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/এমআরএইস