আদালতে যাওয়ার পথে স্ত্রী ও শ্বশুরের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করলেন নির্যাতক জামাই

স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতে সাক্ষী দিতে যাওয়ার পথে স্ত্রী ও শ্বশুরের ওপর হামলা চালিয়েছেন জামাই। এ সময় শ্বশুরের মাথা ফাটিয়ে ও হাতের কব্জি কেটে দিয়েছেন স্ত্রী নির্যাতক জামাই গুলজার হোসেন (৩৫)। স্ত্রীকেও মারপিট করে আহত করেছেন নির্যাতক স্বামী। তাদের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর খানপাড়া এলাকায়। এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আটকে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমানের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লাবনী ইয়াসমিনের (২৮) সঙ্গে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের নতুন আমদহ গ্রামের শফিউল ইসলামের ছেলে গুলজার হোসেনের। কিন্তু বিয়ের প্রলোভনে গুলজারের একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ঘটনা স্ত্রী লাবনী বিয়ের পর জেনে যান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিয়ের এক বছর না পেরোতেই গুলজার তার স্ত্রী লাবনীকে ভরন পোষণ না দিয়ে নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রতারক গুলজার হোসেন স্ত্রী লাবনী ইয়াসমিনকে নির্যাতনের মুখে বাড়ি থেকে বের করে দেন। লাবনী আশ্রয় নেন কৃষক বাবার বাড়িতে।

পরে এ ব্যাপারে লাবনী ইয়াসমিন বাদী হয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আদালতে নারী নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এই মামলায় সাক্ষী দিতে লাবনী ও তার বাবা হাবিবুর রহমান সোমবার ইজিবাইকে (অটোগাড়ি) করে আদালতে যাওয়ার পথে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উপজেলার কল্যাণপুর খানপাড়ায় প্রধান সড়কে গুলজার তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তাদের বহনকারী ইজিবাইকের গতিরোধ করে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুলজার তার স্ত্রী লাবনীকে অাঘাত করতে গেলে ঠেকাতে এগিয়ে যান তার বাবা হাবিবুর রহমান। এ সময় গুলজার হাতে থাকা ওই ধারালো অস্ত্র দিয়ে শ্বশুর হাবিবুর রহমানের (৭০) মাথায় সজোরে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দেন এবং হাতের কব্জি কেটে দেন। গুলজারের হাত থেকে রেহাই পাননি স্ত্রী লাবনীও। তাকেও এলোপাতাড়ি মারপিট করে আহত করা হয়। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।

সোমবার সন্ধ্যায় লাবনী ইয়াসমিন জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গুলজার একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু বিয়ের আগে স্বামীর এসব অপকর্মের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না তারা। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়ায় প্রতারক স্বামী গুলজার তার ওপর অব্যাহতভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে ভরন পোষণ বন্ধ করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন প্রতারক গুলজার। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোয় মেরে ফেলার উদ্দেশে গুলজার তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এই হামলা করেন বলে লাবনী আক্তারের অভিযোগ।

স্ত্রী ও শ্বশুরের ওপর জামাই গুলজার বাহিনীর এই হামলার ঘটনায় সোমবার দুপুরে দৌলতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন লাবনী ইয়াসমিন। এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহুরুল আলম জানান, আদালতে যাওয়ার পথে এই হামলার ঘটনা খুবই ধৃষ্টতাপূর্ণ, এটি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। অবশ্যই হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে আসামিদের আটকে ইতোমধ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এখনো আটক করা যায়নি।