মা হতে এসে লাশ হয়ে ফিরল বন্যা, চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিক পলাতক

নওগাঁয় ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় এক প্রসূতির সিজারিয়ান করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারনে মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রসূতির পরিবার। নিহত ওই প্রসূতির নাম বন্যা খাতুন (২১)। সে নওগাঁ সদর উপজেলার চকপ্রাণ জোঁকাবিল মহল্লার মো. কোয়েল মন্ডলের স্ত্রী।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রসূতি বন্যাকে নিয়ে প্রথমে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় নওগাঁ শহরের সরকারি হাসপাতাল রোডের বেসরকারি মেট্রো হাসপাতাল সিজারিয়ান করানোর জন্য ভর্তি করা হয়। ভর্তির ১ঘন্টা পর ওই প্রসূতির কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই সিজারিয়ানের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।

এর পর সিজারিয়ান করা হলে জন্ম নেয়া সন্তান ভালো থাকলেও প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরন শুরু হয়। এর পর পরিবারের স্বজনরা উদ্বেগ জানালে রক্তক্ষরন বন্ধ করার জন্য পূনরায় প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় কিন্তু তবুও রক্তক্ষরন বন্ধ না হওয়ায় ডা: জেনিফা ইসলাম তিশা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিতে বলেন। পরে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময় পথিমধ্যে বন্যা মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।

পরে নিহতের পরিবারের সদস্যরা শনিবার সকাল থেকে ওই প্রসূতির লাশ নিয়ে ডাক্তার ও মেট্রো হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক রিপন আলী ও তার স্ত্রী সালমার শাস্তির দাবিতে অবস্থান শুরু করেন। নিহত প্রসূতি বন্যা খাতুনের বাবা মো.সামছুল আলম বলেন, গত শুক্রবার সকালে মেট্রো হাসপাতালে সিজার করানোর জন্য আমার মেয়েকে ভর্তি করায় কিন্তু অপারেশন করার আগে বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরিক্ষা করার নিয়ম থাকলেও সেগুলো পরিক্ষা না করেই সরাসরি অপারেশ করেন ডাঃ জেনিফা ইসলাম তিশা ।

আমরা বার বার বলেছি যে ডাক্তার আপা আমার মেয়ের স্বাস্থ্য পরিক্ষা আগে করে নিন কিন্তু তিনি উল্টো আমাদের ধমক দিয়ে বলেন যে আমি ডাক্তার আমার চেয়ে আপনারা বেশি জানেন না। তার পর সিজার করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে আমার মেয়ে ভুল চিকিৎসার কারনে মারা গেছেন। আমি ডাক্তারের কঠিন শাস্তি চাই।

বিষয়টি নিয়ে ডাঃ জেনিফা ইসলাম তিশার ফোনে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। মেট্রো হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার ও ক্লিনিকের নির্বাহী পরিচালক রিপন আলী ও তার স্ত্রী সালমাকে পাওয়া যায়নি।

এঘটনায় নওগাঁ ক্লিনিক এ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মোঃ আতোয়ার রহমান বলেন, মেট্রো হাসপাতালের কোন কাগজপত্র ও ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থপনা ঠিক না থাকায় আমরা ওই ক্লিনিক সমিতির তালিকা ভ’ক্ত করি নাই তারা ইচ্ছে মত ক্লিনিক চালায়।

এবিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ভুল সিজার রোগী মারা যাবার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।

যদি উক্ত ঘটনায় অভিযোগ করে তবে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ এ,বি, এম, আবু হানিফ বলেন, ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।