সংস্কার আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সিলেটের রেলপথ এখন মরণ ফাঁদ

ছবি: সংগৃহীত

নানা ত্রুটি আর জণার্কীণতা নিয়ে চলে ঢাকা-সিলেট রেল। কর্তৃপক্ষের কাছে নেই কোন দায় দায়িত্ব। সংস্কার ছাড়াই চলে সিলেট রেলপথ যার ফলে প্রতিনিহত ঘটছে রেল দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা ঘটলেই সংবাদপত্র,কিংবা টিভি ও অনলাইনে পত্রিকা গুলোতে হয় বড় বড় সংবাদ শিরোনাম। আর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি কিছু দিন যেতেই তদন্ত ফাইলটি পড়ে যায় পেছনের শারিতে।

এদিকে সিলেট রোডে প্রায় মাসেই লাইনচ্যুত হচ্ছে ট্রেন। রেল পথের কারণে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে তেমনি রেলকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শেষ নেই । ফলে এখন সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপদ ভ্রমণের এই পথটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাওয়ে আবার লাইনচ্যুত হয় তেলবাহী ট্রেন। গত বছরের নভেম্বরে দু’বার ও ডিসেম্বরে একবার এই রেলপথে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ট্রেন। দেশের যত গুলো বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ঘটছে ঢাকা-সিলেট রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে।

রেলওয়ের দুর্ঘটনার কারণ খুজতে জানা যায়, প্রতি মাসেই ঢাকা-সিলেট রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে এক বা একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে, এর বেশির ভাগই লাইনচ্যুতির ঘটনা। ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু লাইনচ্যুতির ঘটনাই ঘটেছে ১০টি।

ওই বছরের ১৬ মে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন, ২ জুন শায়েস্তাগঞ্জে কুশিয়ারা এক্সপ্রেস, ২০ জুলাই একই স্থানে কালনী এক্সপ্রেস, ১৯ জুলাই কুলাউডায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ৪ সেপ্টেম্বর ও ১৬ আগস্ট একই এলাকায় উপবন এক্সপ্রেস, ১৭ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জে জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ৪ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জালালাবাদ এক্সপ্রেস,২৯ ডিসেম্বর কুলাউড়ার বরমচালে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।

এছাড়া মুখোমুখি সংঘর্ষ ও সেতু ভেঙে বগি পানিতে পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৯ সালে এ রেলপথে দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২১ যাত্রী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে ছিল নভেম্বরে। ওই ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা শতাধিক। ২০১৯ সালের ২৩ জুন, অর্থাৎ কসবার দুর্ঘটনার পাঁচ মাস আগে সেতু ভেঙে লাইনচ্যুত হয়ে পানিতে পড়ে যায় উপবন এক্সপ্রেসের একটি বগি। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হন,আহত হন ৬৪ যাত্রী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছর সারা দেশ সব মিলিয়ে ৯১টি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়ে ছিল। এর মধ্যে তিনটি ছিল মুখোমুখি দুর্ঘটনা। লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছিল ৭৮টি। অন্য দিকে ২০১৯ সালে সব মিলিয়ে ১২৯টি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হন দেড় শতাধিক যাত্রী। ২০২০ সালে করোনার কারণে দীর্ঘসময় বন্ধ ছিলো ট্রেন চলাচল। ফলে দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছে।

বড় বড় দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-সিলেট রেলপথ সংস্কারের দাবি উঠেছে সব মহলে। নতুন করে রেলপথ তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন সিলেটের সচেতন মহল।