জীবন যুদ্ধে হার না মানা শিক্ষানুরাগী চর্মকার গোপাল রবিদাশ

সামাজিকভাবে মুচি বলে পরিচিত গোপাল রবিদাশ হত দরিদ্র এক চর্মকার। আধুনিক যুগে খোলা আকাশের নিচে কৃষ্ণচুড়া বৃক্ষের গোড়ায় যার প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ঠিকানা। সেই ছোট বেলা থেকে বাবার হাতে খড়িতে শেখা এই পেশা, ফুটপাতের পাশে থাকা বৃক্ষের গোড়ায় বসে গোপাল রবিদাশ বুকের ব্যাথা মুখের হাসিতে ঢেকে চপ্পলটি সোজাসোজি ধরে নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চেপে নেয় আর সূচ গেঁথে তার নিপূণ হাতের ছোঁয়াই সুতা পেচিয়ে বার কয়েক এফোঁড় অফোঁড় করে চপ্পলটি তুলে দেয় গ্রাহকের হাতে,বিনিময়ে গোপাল রবিদাশ পায় মাত্র পাঁচ টাকা বেশী জোড় পালিশে আসে ১৫-২০ টাকা। কোন কোন দিন দুপুরে না খেয়ে সারাদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে কোমড়ে বাঁধা তবিলটি খুলে পাঁচ টাকার কয়েন আর গোড়া কয়েক দশ টাকার নোট, হিসাব কষে দেখা যায় দুইশত থেকে তিনশত টাকা রোজগার,এই স্বল্প আয় দিয়েই চলে গোপাল রবিদাশের সাত সদস্যসের সংশার।

গোপাল রবিদাশের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া, রবিদাশের এক স্ত্রী পাঁচ মেয়ে বয়স ৬৫ বছরের কাছাকাছি তিনিই একমাত্র এই সংশারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। তার সাথে কথা বলে জানা যায় বয়সের ভারে আগের মতো আর জোড় দিয়ে কাজ করতে পারিনা যার কারনে আয় রোজগার কম হয়। মেয়েদেরকে সুশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি,তার সন্তানেরা যেন নিজের এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে সেই আশায় বুক বেঁধেছেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই পিতা। শিক্ষার প্রতি অদম্য আগ্রহী এই মানুষটি আর কতদিন কারো সাহায্য ছাড়া এই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পারবেন সেটা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

আলাপচারিতায় এক পর্যায়ে গোপাল রবিদাশ বলেন আমার পাঁচ মেয়ে তিন মেয়ের বিয়া হচে আর দুই মেয়ে এ্যাখন পরোছে,একজন ঢাকাত এ্যাডা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বি. এস. সি ইনজিনিয়ার পরোচে আর এ্যাডা নওগাঁ মহিলা কলেজে বি এ পরোচে। ঢাকার মেয়েডা নিজে কিছু করে পড়ার খরচ জোগাড় করে সাথে হামি কিছু হিল্লা ধরে খুব কষ্টকরে পড়ায়।হামার থাকার মতো টিনের ছাপড়া দিয়া এ্যাডা ঘর মেয়ে জায়ি ব্যাকে অ্যালে একটে থাকা খুব কষ্ট হয়,অনেক সময় অ্যাতে পানি হলে নিন হয়না উঠে বসে থাকি। জানতে চাইলাম কেন উওরে রবিদাশ বলে টিনের ফুটা দিয়ে পানি পরে তাই উঠে বসে থাকি। এমন কথা বলতে বলতে গোপাল রবিদাশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,তৎক্ষনিক আমি তার অবয়বে দৃষ্টিদিয়ে দেখি দু চোখে ছলছল করছে জল, ধরে রাখতে না পেরে কয়েক ফোটা জল বাম চোখের কোণ হতে গড়িয়ে পড়লো। গোপাল রবিদাশের এক একটি ব্যাক্য আমার হৃদয়কে নাড়া দেয়।

এই সোনার দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো নাকি বেঁচে থাকেনা। কি কারনে বাঁচেনা তানিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নেয়,আমরা শুধু অভিযোগ করেই ক্ষান্ত। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে অনিয়ম আর দুর্নীতির ভিড়ে এজন হত দরিদ্র চর্মকার অসহায় পিতা তার সৎ উপার্জন দিয়ে সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতচোন, অথচ আমরা কেউ তাকে সাহায্য করবোনা,আমরা শুধু কিছু মুখস্ত অভিযোগ করেই যাবো।

ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১ at ১৭:৪৮:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর/এমআরএইস