ঝিকরগাছায় চল্লিশ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকের তালিকায় প্রভাবশালীদের নাম

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও বরাদ্দ আত্মসাতের পায়তারা চলছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও রাজনীতিকরা। এ ইউনিয়নে ২০২ জনের কাজের বরাদ্দ আসলেও কাজে লাগিয়েছেন মাত্র ৮০-৯০ জন শ্রমিক।

ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নানা অনিয়ম দেখা গেছে। অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক না থাকা, সুবিধাবঞ্চিত অসহায়দের তালিকায় প্রভাবশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা। ৪০ দিনের আগেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া। এছাড়াও কাজের মান নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউনিয়নের প্রতিটি প্রকল্পেই কাজ করে অর্ধেকেরও কম শ্রমিক। কাগজে কলমে এসব প্রকল্পে শ্রমিক দেখানো হলেও ইউনিয়নের অনেক প্রকল্পেই শ্রমিককের দেখা মেলেনি। আবার অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শংকরপুর ইউনিয়নের ৬নং উলাকোল ওয়ার্ডে শ্রমিকের তালিকায় দেখা আওয়ামী লীগনেতার স্ত্রী ও ছেলের নাম পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোনাব আলীর স্ত্রী মোছা. জাহানারা ও ছেলে শহিদুল ইসলামের নাম শ্রমিকের তালিকায় থাকলেও তারা কাজ করেন না। শ্রমিকের তালিকায় দেখা যায় প্রভাবশালী আব্দুল হাই এর নামও।

সরেজমিনে দেখা যায়, শংকরপুর ইউনিয়নের ৪নং নায়ড়া-সেকেন্দারকাটি ওয়ার্ডে আতিয়ার মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন একটি পাকারাস্তার কাজ করছেন ১০ জন শ্রমিক। অথচ এ ওয়ার্ডে ২৬ জন শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করার কথা থাকলেও ১০ জন শ্রমিক দিয়ে ২৫ দিন কাজ করেই বন্ধ করা হয়েছে। রাস্তায় শুধুমাত্র ছোট গর্ত ভরাট করা হয়েছে।

এদিকে ১নং বকুলিয়া-শংকরপুর ওয়ার্ডে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও ১৭ থেকে ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ১৯ দিন কাজ করে বন্ধ রাখা হয়েছে। ৫নং রাজবাড়ী ওয়ার্ডে ১৪ জন কাজ করার কথা থাকলেও কাজ করতে দেখা যায় ৯ জন শ্রমিক। তালিকায় দেখা যায় প্রভাবশালী রকিবুল গাজীর নাম।

কর্মরত শ্রমিকরা জানান, প্রথম থেকে ১০ জন শ্রমিক ২৫ দিন পর্যন্ত তারা এই প্রকল্পে কাজ করেছেন পরে আর কাজ করানো হয়নি। পিআইসিরা তাদের কাছ থেকে আগেই সব স্বাক্ষর করে নিয়েছেন। তাছাড়া অনেকের নাম আছে যাদের কোনোদিন প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়নি। সব পরিশ্রম তারা করছেন। কিন্তু সময়মতো টাকা পান না। আর নেতারা কাজ না করেও টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।

ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনৈতিকভাবে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে হতদরিদ্রদেরস্থলে শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজন ও মধ্যবিত্তদের নাম।

নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক মেম্বার জানান, ভুয়া তালিকার বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ওই কর্মসূচিতে যেসব শ্রমিকের নাম রয়েছে সেসব শ্রমিকে কাজ না দিয়ে প্রক্সি শ্রমিক হিসেবে চেয়ারম্যান-মেম্বরদের পছন্দের লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা স্থানীয় প্রকল্প সভাপতিসহ অন্যরা আত্মসাৎ করে থাকেন।

এ বিষয়ে শংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিছার উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন তো কাজের জায়গায় যাওয়া হয় না। মেম্বর ও গ্রাম পুলিশরা রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। তবে কিছু শ্রমিক কম আছে, যা উপজেলায় জানানো আছে।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির স্ত্রী ও ছেলের নাম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সব তালিকাতো পড়া হয়নি। যদিও তাদের নাম থেকে থাকে, তাহলে তাদেও পরিবর্তে হয়তো অন্য কেউ কাজ করছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।