অভিযানের খবরে পালালেন ইটভাটার লোকেরা, ১১ লাখ টাকা জরিমানা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সরকারি নীতিমালা অমান্য করে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোর দায়ে তিন ইটভাটা মালিককে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসন, র‍্যাব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স এই অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে অন্য ইটভাটাগুলোর মালিক কর্তৃপক্ষ ও কর্মরত লোকজন পালিয়ে যান।

জানা যায়, টাস্কফোর্সের এই অভিযানে উপজেলা পরিষদের পাশের এলাকা স্বরুপপুরে বজলুর রহমান কটার ইটভাটায় ৩ লাখ টাকা, একই এলাকায় অবস্থিত তার বড় ভাই আব্দুস সাত্তারের ইটভাটায় ৩ লাখ টাকা এবং উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের সোনাইকান্দি এলাকায় নজরুল ইসলামের ইটভাটায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা এবং জ্বালানি হিসেবে কয়লার বদলে কাঠ পোড়ানোর দায়ে এই তিন ইটভাটা মালিককে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের ডাংমড়কা এলাকায় উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামের ইটভাটায় টাস্কফোর্সের এই অভিযান চালানো হলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযানের খবর পেয়ে এ রকমভাবে বাকি সবগুলো ইটভাটার মালিক কর্তৃপক্ষ ও কর্মরত শ্রমিকরা পালিয়ে যান বলে খবর পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান, র‍্যাব-১২ কুষ্টিয়ার কোম্পানি কমান্ডার মেজর গাফফারুজ্জামান ও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মনের যৌথ নেতৃত্বে সোমবার বেলা ১২টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাস্কফোর্সের এই অভিযান চালানো হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাঠ পোড়ানোর ঘটনায় উপজেলার সবকটি ইটভাটায় পর্যায়ক্রমে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা জানান।

অন্যদিকে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের বাড়িতে কন্ট্রোল রুম বসিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিশ ব্যবসা চালানোর অভিযোগে বিকেলে সেখানেও অভিযান চালান টাস্কফোর্সের কর্মকর্কর্তারা। এ অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করে সিরাজ চেয়ারম্যান ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার মিন্নাত আলী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ডিশ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বলে জানানো হয়।

সিরাজ চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযানের সময় সেখানকার কন্ট্রোল রুমে ব্যবহৃত অবৈধ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ সময় সিরাজ চেয়ারম্যানের স্বজনদের ডেকে এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধের জন্য নির্দেশ দেন কর্মকর্তারা। এর আগেও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অপর অাভিযানিক দল পরপর দুই দফা অভিযান চালিয়ে চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডলের বাড়িতে বসানো ডিশের এই অবৈধ কন্ট্রোল রুমটি সিলগালা করে দেয়।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২৬টি ইটভাটায় সরকারি নিয়মনীতিকে বুড়ো অাঙুল দেখিয়ে জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর এসব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মচ্ছব চলে আসলেও তারা ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। সম্প্রতি এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসনের টনক নড়ে। অবশেষে সোমবার টাস্কফোর্সের এই অভিযান চালানো হয়।