চৌগাছায় একই পরিবারে এক নারীসহ ৪ বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী

কেউ বোঝে না তাদের কথা। আবার তারা নিজেরাও ভোগেন কথা বোঝাতে না পারার কষ্টে। যশোরের চৌগাছায় একই পরিবারে এক নারীসহ ৪ বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি এমনই কষ্টে বছরের পর বছর পার করেছেন। জন্ম থেকেই তারা বাক প্রতিবন্ধি। তাদের বসবাস উপজেলার বাজে খড়িঞ্চা গ্রামে । প্রতিবন্ধি হওয়ায় তারা সরকারি সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। তবে বসবাসের জন্য তাদের নেই তেমন কোন বাড়ি ঘর। এ জন্য মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বাজে খড়িঞ্চা একটি গ্রাম। এই গ্রামের মৃত আবুল কাশেম কাটুর ৯ ছেলে মেয়ে। এরমধ্যে ৬ ছেলে আর ৩ মেয়ে। ৯ সন্তানের মধ্যে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি। এই প্রতিবন্ধিদের মধ্যে একজনের এক ছেলেও হয়েছেন প্রতিবন্ধি তার বয়স এখন ১৯ বছর।

প্রতিবেশিরা জানান, আবুল কাশেম কাটুর বড় ছেলে জয়নাল আবেদিন। বাক প্রতিবন্ধি অবস্থায় তার জন্ম। দশ বছর আগে ৪৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ওই পরিবারে বর্তমান সদস্য হচ্ছে ৪ জন। আবুল কাশেম কাটুর অপর ছেলে আক্কাস আলী (৩৭)। তিনিও বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি। স্ত্রী সাবান খাতুনসহ তার পরিবারে মোট ৫ জন সদস্য। প্রতিবন্ধি আক্কাস আলীর এক ছেলে সুজন মিয়া (১৯)। জন্মের পর হতে তিনিও বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি। আবুল কাশেম কাটুর আরও এক ছেলে আক্তার আলী (৩২) বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি। এই বাক প্রতিবন্ধির স্ত্রী আঞ্জুয়ারা সহ ওই পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ৯ ভাই বোনের মধ্যে বোন ফজিলা খাতুন (৩০) বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি। বিয়ের পর স্বামী আব্দুল কাদেরকে নিয়ে সে পিতৃলয়ে থাকেন। তার সংসারে মোট সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৫ জন।

স্থানীয়রা জানান, মৃত আবুল কাশেম কাটু বেশ স্বচ্ছল ব্যক্তি ছিলেন। মুলত কৃষি কাজ করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাঠে যে সম্পত্তি রেখে গেছেন তা ভাই বোন মিলে প্রায় ২ বিঘা করে জমি পেয়েছেন। প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়ে সকলেই মাঠে কাজ করেই সংসার চালায়। কাটুর বড় ছেলে জন্ম গ্রহনের পর আর দশটি শিশুর মতই বেড়ে উঠতে থাকে। এরপর অন্য শিশুদের মত সে কথা বলতে পারেনা এমনকি কানেও শুনতে পারেনা। স্বাভাবিক ভাবে সকলেই ধরে নেয় শিশুটি বোবা হয়ে জন্ম নিয়েছে। এরপর একে একে ৮ সন্তান আসে তার পরিবারে। এরমধ্যে ৩ জনই হয়ে যান বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি।

প্রতিবন্ধিরা কথা ও কানে না শুনতে পারাই অনেক কষ্ট পাই। নিজেরা অন্যকে বোঝাতে পারেনা এমনকি অন্য কেউ তাদের কথা সহজে বুঝতে পারেনা। তারপরও বছরের পর বছর এক সাথে থাকায় ইশারা ইঙ্গিতে এখন অনেক কিছুই বোঝা যায়, বা তারা নিজেরাও বোঝার চেষ্টা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবন্ধিতা রোধ করতে হলে গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে। ওষুধ গ্রহনে সতকর্তা থাকতে হবে। প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করতে হবে এবং জন্মের পর শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুকে লালন-পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ার হোসেন একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সরকার প্রদত্ত সকল সুযোগ সুবিধা পরিবার গুলো পাই। সরকার যদি নতুন করে কিছু দেয় তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদেরকে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

জানুয়ারী, ১৩, ২০২১ at২১:২৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএমআই/এমএমআর