পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ: আ.লীগ নেতা বিপুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে ঢাকায় প্রেরণ

তুচ্ছ এক ঘটনায় পুলিশের সদস্য মারপিটের স্বীকার হওয়ার অভিযোগে যশোর পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। ১৯ ঘন্টা পর এসএম মাহমুদ হাসান বিপুকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এরপর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় পুলিশ দুই জনকে আটক দেখিয়েছে। আটকদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

আওয়ামীলীগ নেতাদের অভিযোগ, মাহামুদ হাসান বিপুকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার (১৩জানুয়ারি) বিকালে হেলিকপ্টারে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়ে যাওয়া হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছেন।
আওয়ামীলীগ নেতাদের অভিযোগ, বিপুকে নির্মম নির্যাতন করে পুলিশ থামেনি। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে শহরের অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তারা সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন।
তবে, যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ আশরাফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘পুলিশ সদস্য মারপিট ও আটকে রাখার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ওই সোমবার রাতে অভিযান চালানো হয়েছে।

তবে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। কোনও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়নি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। সেখানে পুলিশের টিম কেবল যাচ্ছে। তারা বেআইননিভাবে ভাঙচুর করেছে, এমন কোনও ছবি নেই। এমনকি পুলিশ হেফাজতে বিপুকে কোনও প্রকার মারপিটের ঘটনাও ঘটেনি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, তিনি একজন সম্মানিত লোক, জিজ্ঞাসাবাদের কিছু নিয়ম আছে; সেগুলো মেনেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারপরও অভিযোগ যেহেতু আসছে, সে কারণে সিনিয়র কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত টিম করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনও ব্যত্যয় হলে তা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই বলা সম্ভব হবে।’

পুলিশ সদস্য ইমরান হোসেন (কনস্টেবল নং ১৭৭২) বে-আইনী জনতাবন্ধে আটক করে সাধারণ জখম, সরকারী কাজে বাঁধাদান, চুরি, হুকম ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। সে মামলায় যশোর শহরের চুড়িপট্রি এলাকার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহিনুজ্জামান @ তপু (৪৮), শহরতলীর কিসমত নোয়াপাড়ার মো. মকবুল হোসেনের ছেলে ইসলামুল হক @ তন্ময় (২৪), কাজীপাড়া কাঁঠালতলার অজ্ঞাত পিতা ইলিয়াস হোসেন @ রিয়াদ (২৮) ও কাজীপাড়া কাঁঠালতলার পিতা অজ্ঞাত রাব্বিসহ (২৪) অজ্ঞাত ২০/২৫ জন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে শাহিনুজ্জামান @ তপু ও ইসলামুল হক @ তন্ময়কে পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক যুবকের সাথে তুচ্ছ ঘটনায় বাকবিতন্ডে জড়িয়ে পড়েন পুলিশ সদস্য ইমরানসহ তার দুই সহকর্মী। এক পর্যায়ে হাতাহাতিসহ চড় থাপ্পড়ে রুপ নেয়।

পাশেই রাসেল ক্লাব থেকে খবর পেয়ে যশোর পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুসহ কয়েকজন তাদের মিমাংসার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি অনূকুলে না থাকায় জোনরোশ থেকে পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে স্থানীয় কাঁঠালতলায় পাঠানো হয়। এর পুলিশ বিপুসহ কয়েকজনকে তুলে নিয়ে যায়।

মাহামুদ হাসান বিপু বলেন, ঘটনার সময় আমি আবু নাসের স্মৃতি সংসদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন শহর আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা এসে বলেন, “শহীদ মিনারের সামনে মারামারি হচ্ছে, পারলে ঠেকাও।”

এগিয়ে গিয়ে দেখি, একটি ছেলেকে কয়েকজন মিলে মারধর করছে। আমি ছেলেটাকে সেভ করি। অন্যদের বলি, কেন মারছো, চলে যাও সব। ওরা বলে আমাদের মেরেছে এজন্য মারছি। পরে আমি তাদের চলে যেতে বলি। তখন দেখি আরও অনেকে দৌড়ে আসছে। তখন ছেলেটাকে রক্ষা করতে একটি মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে বলি, ছেলেটাকে একটু কাঁঠালতলা অফিসে পৌঁছে দিতে। ওই অফিসটি জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শাহীন চাকলাদারের ব্যক্তিগত কার্যালয়। ভেবেছিলাম, ওখানে পাঠালে কেউ আর ছেলেটাকে মারতে পারবে না এবং ওসি সাহেবকে খবর দিয়ে ছেলেটাকে তাদের হাতে দিয়ে দেব।

ওসি সাহেবকে ফোন দিতে দিতে পুলিশ চলে আসে। পুলিশকে বিষয়টি বর্ণনা করি। এরপর ওই ছেলেটাকে কাঁঠালতলা অফিস থেকে ফিরিয়ে এনে পুলিশের কাছে দিয়ে দিই। এরপর ওসি ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসে কে পুলিশের উপর হাত দিয়েছে জানতে চান। তখন আমি জানতে পারি, আক্রান্ত ছেলেটি পুলিশ সদস্য। এরপর হঠাৎ আমার ঘাড়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পুলিশ। আমি জিজ্ঞাসা করছি, এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি করছেন। এরপর আমাকে ধরে পুলিশ প্রথমে থানায় ও পরে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়।

মাহামুদ হাসান বিপু অভিযোগ করেন, পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাকে কয়েক দফা নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে।